ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় মোখা: জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির শঙ্কা কম

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১১ মে ২০২৩ ১০:৩৬:০০ অপরাহ্ন | এক্সক্লুসিভ

ঢাকা: দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আগামী রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে স্থলভাগে ওঠে আসবে।

 

 

উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়ের গতিবেগ অতি প্রবল হলেও (১১৮ কিলোমিটারের বেশি) জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতির শঙ্কা তুলনামূলক কম। কেননা জলোচ্ছ্বাস বড় আকার ধারণ করে ঝড়ের ডান পাশের এলাকায়। গাণিতিক মডেল অনুযায়ী মোখার ডানপাশে থাকবে মিয়ানমারের উপকূল। কাজেই জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে মিয়ানমার।

আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয় জলোচ্ছ্বাসের কারণে। মোখার যে গতিপথ, এর বাম পাশে কক্সবাজার ও ডান পাশ মিয়ানমার। আর জলোচ্ছ্বাস বড় আকার ধারণ করে ঝড়ের ডান পাশে। এদিক থেকে বাংলাদেশে বিপদের শঙ্কা অপেক্ষাকৃত কম।

আবহাওয়াবিদ গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। মূলত কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি প্রভাব থাকলেও নোয়াখালী পর্যন্ত এর প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী আনন্দ কুমার দাশ জানিয়েছেন, গতিপথ পরিবর্তন না হলে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানবে মোখা। রোববার দুপুরের দিকে আঘাত হানার সময় গতিবেগ থাকতে পারে ১৬০ কিলোমিটারের মতো। ঝলোচ্ছ্বাস হতে পারে দেড় থেকে দুই মিটার উচ্চতার।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে চলে আসতে পারে আগামী দু’দিনে। এছাড়া আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে অতিভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, আগামী তিন দিনে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে।

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় (১২.১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি আজ (১১ মে) সন্ধ্যা ০৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আগামীকাল (১২ মে) সকাল পর্যন্ত উত্তর দিকে অগ্রসর ও আরও ঘণীভূত হয়ে পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০২ নম্বর (পুন:) দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোখা নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম মোখা। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে মোখা। ইংরেজিতে শব্দটি ‘এমওসিএইচএ’ লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে ‘এমওকেএইচএ’।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভুক্ত ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যাক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এরমধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে।