ঢাকা, রবিবার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চুনারুঘাটের রিপনের স্বপ্নডুবি ভূমধ্যসাগরে

সিলেট ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারী ২০২৩ ০৬:৪৬:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

 



স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় মৃত্যুঝুঁকি জেনেও দালালদের লোভনীয় প্রস্তাবে সম্মত হয়ে স্বপ্নের ইউরোপে যাওয়ার জন্য আফ্রিকা পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. রিপন মিয়া (৩৯)। আফ্রিকা থেকে আলজেরিয়া হয়ে অবশেষে স্বপ্নের ইউরোপে রিপন পাড়ি দিয়েছেন ঠিকই, তবে জীবিত নয়- মৃত। মৃত মো. রিপন মিয়া হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাবু মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, এক সন্তানের জনক রিপন মিয়ার দেশে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীসহ বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন রেখে ইউরোপের উদ্দেশ্যে আফ্রিকায় পাড়ি জমান। গত ৩১ অক্টোবর দালাল মাধ্যমে আলজেরিয়ার ওরান থেকে রাতের বেলা স্পিড বোট যোগে অন্যান্য দেশের আরো ১৮ জনসহ রিপন মিয়া রওনা হয় স্পেনের উদ্দেশ্যে। উত্তাল ভূমধ্যসাগরে ৬ ঘন্টার যাত্রা শেষে যখন স্পেনের উপকূল দৃষ্টিসীমায় আসে সে সময় নৌকা থেকে তারা লাফিয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক পানিতে ডুবে মারা যায় মো. রিপন মিয়াসহ কয়েকজন মরক্কোর নাগরিক। নৌকা থেকে তিনজন বাংলাদেশিসহ ১৬ জন স্পেনের আলমেরিয়ায় পৌঁছেন।

রিপন মিয়ার হয়তো স্বপ্ন ছিলো- ইউরোপে পৌঁছে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে স্ত্রী,সন্তান বাবা মাকে সংসারের হাল ধরবেন হয়তো এমন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু কারোরই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না কোনোদিন। কারণ- রিপন মিয়া র প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে চিরতরে। সেই রিপন মিয়া ফিরছেন দেশে। তবে জীবিত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।

স্পেনের এনজিও সিআইপিআইএমডির পক্ষ থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) আলমেরিয়ার গিয়ে মো. রিপন মিয়ার মৃতদেহ শনাক্ত করেন। রিপন মিয়ার পরিবারের অনুরোধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রিপন মিয়ার মরদেহ অবশেষে ফিরছে প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে, ফিরছে নিজের স্ত্রী, সন্তান আর বাবা মায়ের কাছে। তবে জীবিত রিপন মিয়া নয়, কফিনে শুয়ে। আগামী ৫ জানুয়ারি দুপুরে টার্কিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে তার মরদেহ পৌঁছাবে বাংলাদেশে।

গত ৪ নভেম্বর মো. রিপন মিয়া আরেকটি ছেলে সন্তানের পিতা হন। রিপন মিয়া কখনো আর জানবে না সে সন্তানের কথা, তার সন্তান আর কখনো পাবে না পিতার স্নেহমাখা হাতের পরশ। রিপন মিয়ার সকল স্বপ্ন, সকল আশার পরিসমাপ্তি ঘটল ভূমধ্যসাগরের অতল জলরাশিতে।

স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মূতাসিমুল ইসলাম জানান, সাগরপথে লিবিয়া ও আলজেরিয়া থেকে ইউরোপে এই ধরনের দূর্গম পথে যাত্রা অত্যন্ত বিপদসংকুল। দালালের প্ররোচনায় এই ঝুঁকিপুর্ণ সাগরপথে পা না বাড়ানোর জন্য তিনি প্রবাসীদের অনুরোধ করেন।

রিপনের জীবনাবসানের গল্প অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন- নিজ পরিবার, সন্তান, বাবা-মায়ের ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে দূর প্রবাসে এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।