ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর রিসার্চ নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:০৮:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর রিসার্চ নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ করেছে একই বিভাগের ৪৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী।
 
 
 
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) উপাচার্য বরাবর এ অভিযোগ পত্র জমা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জেসমিন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের (সেশন ২০২১-২২) থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী। 
 
 
 
জেসমিন তার লিখিত বক্তব্যে জানায়, ২০২১ সালে আমি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। ৩য় বর্ষের ৩০৯ নং কোর্সের (Course Title: Political Economy of Bangladesh) কোর্স শিক্ষক জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি আমার লেখা একটি অ্যাসাইনমেন্টের প্রশংসা করেন। এর কিছুদিন পর একদিন তিনি ফোন দিয়ে রচনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে আমি অন্য আরেকজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে রচনাটি প্রকাশ করার জন্য কাজ শুরু করি। । তিনি ঐ সুপারভাইজারের কাছ থেকে রচনাটি নিয়ে এসে তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করার জন্য বলেন। কাজেই অনিচ্ছা স্বত্বেও ঐ সুপারভাইজারের থেকে রচনাটি নিয়ে জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করতে সম্মত হই। কিছুদিন পর তিনি আমার রচনাটি কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই "Becoming An Asian Tiger: What Lesson Bangladesh Can Get From East Asian Miracle?" শিরোনামে "International Journal of Social Science and Human Research" জার্নালে ২০২১ সালের মার্চ ইস্যুতে প্রকাশ করেন। 
 
 
 
তিনি আরও বলেন, তিনি আমার রচনাটি হুবহু প্রকাশ করার পরও আমাকে অবগত না করে তাঁর নাম প্রথম লেখক হিসেবে দিয়েছেন এবং আমার নাম দ্বিতীয় লেখক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তখন আমি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়া স্বত্বেও তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার টাইটেলে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে শিরোনাম সংশোধন করার অনুরোধ স্বত্বেও তিনি তা সংশোধন করেননি। রচনাটি প্রাথমিক ড্রাফট হিসেবে থাকায় এবং পরে কোনরূপ এডিট না করায় 'Plagiarism' থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও আমার টাইটেলে ভুল থাকায় প্রকাশনাটি আমার ভবিষ্যৎ শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে আমি তখন থেকেই আশঙ্কায় থাকি। এই ঘটনায় তখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং এটি আমার শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনকেও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অবৈধ ক্ষমতা চর্চা এবং সুবিচার না পাওয়ার শঙ্কায় তখন আমি অভিযোগ করতে সাহস পাইনি। আমার সম্মতি ছাড়াই ভুল তথ্য ব্যবহার করে আমার একাডেমিক এবং ক্যারিয়ারকে হুমকির সম্মুখীন করায় জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া'র যথাযথ বিচার দাবি করছি। 
 
 
 
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জেসমিন বলেন, আমি আমার লেখাটি তাকে প্রকাশের জন্য দিয়েছি এটা সত্য। তবে তিনি যে আমার লেখা হুবহু ব্যবহার করবেন তা জানা ছিল না। এই রিসার্চটি আমি অন্য শিক্ষকের আন্ডারে যখন সম্পন্ন করছিলাম তখন তিনি আমাকে জোর করায় আমি তার কাছে নিয়ে আসি। তিনি আমার লেখাটা হুবহু নকল করে শুধু মাত্র শিরোনাম পরিবর্তন করেছেন। আমার রিসার্চ তিনি যেটা প্রকাশ করেছেন সেটা সম্পূর্ণ না। তিনি কোন জার্নালে প্রকাশ করবেন তাও তিনি জানান নি। প্রকাশের পর জানতে পারি এবং তখন নজরে আসে তিনি আমার নাম পরে ব্যবহার করেছেন।‘
 
 
 
এতদিন পর অভিযোগ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতদিন তারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। অভিযোগ করেই কোনো ফলাফল পেতাম না। উলটা দেখা যেত আমি আমার পড়াশোনা শেষ করতে পারতাম না। এখন নতুন উপাচার্য, নতুন প্রশাসন আসবেন আশা করি তারা এর সঠিক বিচার করবেন।‘
 
 
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক মো ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এই লেখাটি জার্নালে প্রকাশের জন্য সে আমাকে বলেছিল, এবং সে একটি মডিফাইড কপি আমাকে মেইল করেছিল প্রকাশের জন্য। আর এই বিষয়টা নিয়ে তার যদি কোনো সংশয় থেকেই থাকে সে জার্নালে ফোন দিয়ে এটি উইথড্র করে নিলেই পারত। এটা শুধু একটা অনলাইন জার্নাল ছিল। আর এটা আমি আমার প্রোফাইল বা অন্য কোথাও সংযুক্ত করি নাই। তবে যেহেতু এখন এটা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে আমি নিজে মেইল করব যাতে জার্নাল কমিটি পেপারটি সরিয়ে ফেলে।
 
 
 
শিক্ষার্থীকে জোর করে তার সুপারভাইজার পরিবর্তন করতে বাধ্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কখনো হয় নি যে এক শিক্ষক অন্য শিক্ষকের কাছে থেকে রিসার্চ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসতে পারে। এটা আমার কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। আমি তার সম্মতিতেই এই রিসার্চ জমা দিয়েছে। তার আপত্তি তার নাম পরে দেওয়াতে। কিন্তু সাধারণত রিসার্চ প্রকাশের সময় শিক্ষকের নাম আগে এবং শিক্ষার্থীর নাম পরে দেয়া হয়। তার আপত্তি থাকলে সে সরাসরি মেইল করতে পারত। যা সে করে নাই।  
 
 
 
 সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক তারানা বেগম বলেন, আজকে আমরা একটা অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। এটা এখনো আমি দেখতে পারি নাই। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে, আমরা শিক্ষকরা মিটিং এর মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।