জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগ। এসময় ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির এবং হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ২:৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথা ঠাকুর হলের ফটকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর এ হামলা চালায় হল ছাত্রলীগের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ২ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে শিক্ষার্থীরা পৌছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মানব ব্যারিকেড দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উচ্চবাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে মানব ব্যারিকেড ভেঙে হলের ফটকের দিকে অগ্রসর হলে গেটের সামনে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের উপর আসবাবপত্র দিয়ে আক্রমন করে। এতে আহত হয় দুইজন শিক্ষার্থী।
আহত শিক্ষার্থীরা হলে ৪৯তম ব্যাচের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব এবং ৫১তম ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। সোহাগী সামিয়াকে চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, আমরা যখন হলগেট থেকে ফিরে এসে ফাকা স্থানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। এই সময়ই একটা ইটের ভাঙা অর্ধেক অংশ আমার পায়ের উপর এসে পড়ে। পরে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।
অন্য ভুক্তভোগী আহসান লাবীব বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে এসে উপস্থিত হই৷ এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের হল গেটে যেতে বাধা দেয়। আমরা শিক্ষকের সাথে কথা বলতে নিলে আমায় সামনে থেকে প্রথমে মাথায় ঘুষি দেয়া হয়৷ পরে আমার বুকেও আঘাত করে তারা। এতে করে আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে আমি ক্যাম্পাস মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করি।
এ বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা রাত ১১ টার দিকে খবর পাই যে আমাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুইজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা অতিথি কক্ষে নিয়ে র্যাগিং করছে। এটা জানা মাত্রই আমরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে এসে উপস্থিত হই। প্রভোস্টের কাছে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার অনুরোধ করলেও তিনি আমাদের কোনো রকম সাহায্য করেন নি। উল্টো আমাদের সকল শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে হল গেটের দিকে অগ্রসর হলে ছাত্রলীগ মানবব্যারিকেড দেয়। মানব ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে অগ্রসর হলে তারা হলগেটে আমাদের চেয়ার টেবিল দিয়ে আঘাত করে এবং ছাদ থেকে ইট পাটকেল ছুড়ে দেয়। এতে আমাদের দুইজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
এ বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আমরা বলেছিলাম নির্যাতন কান্ডে যারা জড়িত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করতে। কিন্তু হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগের সাথে মিটিং করে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর আক্রমন করলে আমাদের দুইজন আহত হয়। এরমধ্যে সোহাগী সামিহাকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এই হামলার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, আমি এই ঘটনার পরই শিক্ষার্থীদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছি। এখন আমার কাছে জানতে চাইলে আমি তথ্য দিতে পারব তবে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখি না এখন। হলে ৪৩,৪৪,৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কথা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বললেও আমি তাদের উপস্থিতি পাই নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবিরকে একাধিকবার ফোন দেয় হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।