ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

জামাই সুমনের গজবের হাত গোয়াইনঘাটজুরে

এমএ রহিম, সিলেট : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩১ অগাস্ট ২০২৩ ০৯:১৪:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেটের গোয়াইঘাটজুরে জামাই সুমন সিন্ডিকেটের গজবের হাত পড়েছে। প্রতিদিনই অবেধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু পাথর হাতিয়ে নিচ্ছে জামাই সুমন ও তার সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন চললেও ওই সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করার কোনো পদক্ষেপ নেইনি প্রশাসন। স্থানীয় সংসদীয় আসনের বড় নেতার নাম ব্যবহার করে সিন্ডিকেটটি তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। অবশ্য গোয়াইনঘাটের প্রশাসন বলেছে বিষয়টি তাদের জানা নেই। কেউ বালু ও পাথর উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানিয়েছে জামাই সুমনের সিন্ডিকেটে রয়েছে আলিম উদ্দিন, সুভাষ, ফয়জুল ও মুজিবুর। এই সিন্ডিকেটের রয়েছে বিশাল বাহিনী। ওই বাহিনীর কাজ হলো গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদীসহ অন্যান্য উৎস থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের ব্যবস্থা করা। এই বাহিনীর সদস্যরা আবার নিয়মিত খাস কালেকশন করে থাকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।  

স্থানীয়রা জানান, জামাই সুমন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে উজার হচ্ছে চা বাগান। অনেকে হারাচ্ছেন বসতবাড়ি। জাফলং সেতু পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। যেখানে বালু পাথর সেখানেই হাত পড়ছে জামাই সুমন সিন্ডিকেটের। ফলে গোয়াইনঘাটজুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

জাফলং এর কাছাকাছি কান্দু বস্তি ও নয়া বস্তি গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা জামাল জানান, গ্রাম দুটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠেছে। গ্রাম দুটির অর্ধেকই ইতোমধ্যে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বালু ও পাথর খেকোদের কারণে। তিনি জানান, ওই দুটি গ্রামের কোল ঘেঁষে পিয়াইন নদীতে স্থাপন করা হয়েছে ড্রেজার মেশিন। প্রতিদিন রাতের আঁধারে সেখানে গিয়ে নোঙর করে বিশাল আকারের অসংখ্য বলগেট নৌযান। রাত গভীর হয়ে এলে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বলগেটগুলোতে পাথর ও বালু লোড শুরু হয়। বিশাল আকারের পাইপের সাহায্যে বলগেটগুলো ভর্তি হয়ে যায় পাথর ও বালুতে। ঝুঁকি এড়াতে শেষ মূহূর্তে বলগেটের উপরে বালু দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাটের বালু ও পাথর উত্তোলনের জন্যে কোনো ইজারাদার নিয়োগ করেনি সরকার। ইজারাও দেয়া হয়নি নদী ও বালু মহাল। কিন্তু জামাই সুমন সিন্ডিকেট পাথর ও বালু উত্তোলন করছে অবাধে। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বালু পাথর উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন বড় আকারের প্রায় ৩০০ বলগেট নৌযান দিয়ে বালু ও পাথর ছাতক পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। প্রতিটি বলগেট নৌযান কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার ফুট বালু বহন করতে হয়। ওই হিসেবে প্রতিরাতে গোয়াইনঘাট থেকে ২৪ লাখ ফুট বালু পাচার হয়ে যাচ্ছে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার উপরে। অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে তা হজম করার জন্যে প্রতিদিনই মোটা অঙ্কের চাঁদা ভাগ বাটোয়ারা হয়। যার পরিমাণ কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা। ২৫ লাখ টাকার এই চাঁদা প্রতিদিনই চলে যায় বিভিন্ন সেক্টরে। যার জন্যে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জানান গোয়াইনঘাটের কোনো নদী বা বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি। কেউ যদি সরকারি বিধিমালা উপেক্ষা করে বালু পাথর উত্তোলন করে তবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।