সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড়ের মাটি দিয়ে নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ড্রাম ট্রাক বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালাও।
পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দন্ডনীয় অপরাধ হলেও উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হরিপুর, শিকার খাঁ, ৭ নাম্বার, শ্যামপুর, চান্দঘাট, বাগেরখাল, চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরের মাঠি, ঘাটেরচঠি, উমনপুর, নিজপাট ইউনিয়নের আলু বাগান, গুয়া বাড়ি, ভিতরগুলসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় পাহাড় ও টিলা কাটা চলছে।
অভিযোগ ওঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে টিলা কাটা চলছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় টিলা কাটতে দেখা গেছে। এসব টিলা ও পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে চিহ্নিত পাহাড় খেকো। একদিকে জৈন্তাপুর যেমন হারাচ্ছে সৌন্দর্য তেমনি দিন দিন কমছে কৃষি জমি।
স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার শিকার খাঁ গ্রামের নূর মিয়ার ছেলে মুহাম্মদ ড্রাইভার, ৭ নাম্বার এলাকার জুয়াদ আলীর ছেলে কিবরিয়া, জাকারিয়া, মনা দের ছেলে জুবের আহমদ, উৎলার পার এলাকার মৃত নূর মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ, আব্দুস সালামের ছেলে নাজমুল আলম, চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরের মাঠি এলাকার ইউপি সদস্য মছদর আলী সহ আরো অনেকেই পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছেন।
টিলা কাটার ব্যাপারে এলাকার লোকজন প্রশাসনকে অবগত করলেও সে সময় কোনো অভিযান চালানো হয় না। ফলে দিন দিন টিলা ও পাহাড় কাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসনকে হাত করে পরিবেশ ধ্বংস করছে বলে যানায় পরিবেশ ধ্বংস কারিরা।
সম্প্রতি করিচ নদী ভরাট, হরিপুর গরুর বাজার ভরাট, কৃষি জমি ভরাট ও বিভিন্ন রাস্তার কাজে পাহাড়ের মাঠি ব্যবহার করছে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের মতে, উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালায়। সামান্য জরিমানা আদায় করেই নিজেদের কর্মতৎপরতা দেখায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাহাড়কর্তনকারী বলেন, আমরা পাহাড় কাটি সব কিছু ম্যানেজ করে, প্রশাসনের কোন ক্ষমতা নেই আমাদের কিছু করবে।
এ ব্যাপারে পরিবেশকর্মী আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, পাহাড়কাটা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনে স্পষ্ট লঙ্গন। আমরা উন্নয়ন চাই কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের নষ্ট করে উন্নয়ন চাইনা। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। ঘটবে মারাত্মক ভূমিধস। সময় থাকতে যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে পরবর্তীকালে আমাদেরই পস্তাতে হবে।
জৈন্তাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপা মনি দেবী বলেন, টিলা ও পাহাড় কাটা বন্ধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে। রবিবার বিকাল ৪টায় চিকনাগুল শুক্রবারী বাজার এলাকায় নিজ চোখে দেখে আসলাম সেখানে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিককে খুঁজে পাইনি।
তিনি এলাকার লোকদের সচেতনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এলাকার লোকজনকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। নিজের পরিবেশ বাঁচাতে নিজেদের উদ্যোগী হতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন বলেন, যেখানে পাহাড় টিলা কাটা হয় সেখান্্ই অভিযান চালানো হয়। মামলা দেয়া হয়। জরিমানা করা হয়। নোটিশ দেয়া হয়। আবার কাটলে অভিযান চালানো হবে।