ঢাকা, শনিবার ৪ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অর্ধশত বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে পাঠদান

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৩:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে মাটির ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অর্ধশত বছরের পুরোনো এই মাটির ঘরেই ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকেরা। চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় প্রযুক্তিগত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে মরহুম আবদুল হাই ছালাফি মাদ্রাসাটি স্থাপন করেন। এরপর শর্তপূরণ সাপেক্ষে মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্তি হয়। ওই বছরই এলাকার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই মাদ্রাসার আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাদ্রাসা বা স্কুল নেই। এই মাদ্রাসায় একই সঙ্গে বিজ্ঞান, মানবিক, মোজাব্বিদ ও হিফজুল কোরআন অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চারটি শাখায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হয়। বর্তমানে এই মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষক ও দুই জন কর্মচারী রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী ওই এলাকার মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় ৩৫ গজের লম্বা জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘর। ঝুঁকি নিয়ে সে ঘরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টিতে যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এই মাটির ঘর। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকেরা।   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নেই, তবুও চারতলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকার পরেও পাকা ভবন নেই। বসার জায়গা দিতে পারি না। উপজেলার অনেক স্কুল, কলেজে পাকা ভবন আছে, আরও হচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নেই। ডিজিটাল যুগে এখনও কী শিক্ষার্থীরা মাটির ঘরে পাঠদান নিতে চায়? শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে তিনি প্রতিষ্ঠান ভবন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন সরকারের কাছে। 

শিক্ষকরা জানায়, এর আগে জেলা পরিষদ থেকে টিন সেট ভবন পেয়েছি তার একটিতে শিক্ষকদের বসার রুম, অন্যটি মেয়েদের কমন রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা এই মাদ্রাসার অবকাঠামোগত অবস্থা দেখে যোগদান করতে চায় না। একাডেমিক ভবনের সমস্যার কারণেই অনেক শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বাইজিদ খান বলেন, আমাদের মাদ্রাসা ছাড়া বর্তমান সময়ে উপজেলায় কোনো স্কুল বা মাদ্রাসায় মাটির ঘর নেই। এই মাটির ঘরের মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম এই মাদ্রাসা থেকে এইচএসসি  পরীক্ষা দেব, এই সময়টুকুতে শিক্ষকদের মুখে শুধু শুনেই গেলাম আমাদের চারতলা বিল্ডিং হবে। কিন্তু কবে যে হবে সেটির অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।  

মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ তালিবুর রহমান বলেন, মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নত না থাকায় অনেক ছেলে-মেয়ে ভর্তি হতে চায় না। বাধ্য হয়েই দীর্ঘদিনের পুরনো মাটির ঘরেই ক্লাস নিচ্ছি। ঘরের টিনের চাল মরচে ধরেছে, মাটির দেয়ালও ফেটে যাচ্ছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সব সময় শঙ্কায় থাকি। আমাদের একটি একাডেমিক পাকা ভবনের জরুরি প্রয়োজন। আমি উর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। 

স্থানীয় এলাকাবাসী আনোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেইে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে মাদ্রাসাটির অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি করেন। 

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এই মাদ্রাসার একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি একটি ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও পাইনি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় একটি মাত্র মাদ্রাসাই মাটির ঘর আছে। প্রতিষ্ঠানের শুরুতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মাদ্রাসাটি ওই দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভালো ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক, ফলাফল সন্তোষজনক। শিক্ষার গুণগতমান আরও উন্নত করতে এই প্রতিষ্ঠানে একটি একাডেমিক পাকা ভবন প্রয়োজন জরুরি।