ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পর পরই দেশের বাজারে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে দুইদিনের ব্যবধানেই দ্বিগুণ দাম বেড়ে যায় সব ধরনের পেঁয়াজের।
হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে পেঁয়াজ কেনা কমিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারাও। যদিও বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় এখন আবার দাম কমতে শুরু করেছে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা পেঁয়াজের বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
এদিন সকালে পাইকারি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আটশ টাকা পাল্লা (পাঁচ কেজি) বা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগেই যা নয়শ টাকা পাল্লা বা ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তারও দুইদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৫০০-৫৫০ টাকা পাল্লা বা ১০০-১১০ কেজি দরে টাকা দরে।
এছাড়া বর্তমানে চীনের পেঁয়াজ পাল্লা ৫৫০-৬০০ টাকা (কেজিতে ১১০-১২০ টাকা), মিশরের পেঁয়াজ ৬২০ টাকা (কেজিতে ১২৪ টাকা), ফরিদপুরের নতুন পেঁয়াজ ৬০০ টাকা (কেজিতে ১২০ টাকা), ফরিদপুরের পুরান পেঁয়াজ ৯৫০ টাকা (কেজিতে ১৯০ টাকা), পাবনার পেঁয়াজ ৯৫০ টাকা (কেজিতে ১৯০ টাকা), রাজশাহীর পেঁয়াজ ৯৫০ টাকায় (কেজিতে ১৯০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারে একদিন আগেও ফরিদপুরের পুরান পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৯৬ টাকা ও নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২শ টাকা দরে। আর চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা দরে।
পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। বর্তমানে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও দেশি পাবনার পেঁয়াজ ২২০ টাকা এবং ফরিদপুরের নতুন পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
পেঁয়াজের দাম গতকালের তুলনায় কিছুটা কমলেও ক্রেতা বাড়েনি। এদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজের বাজারের চারটি দোকানে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এই এক ঘণ্টায় একটিও ক্রেতা আসেনি সেসব দোকানে। পুরো বাজারজুড়েই একই অবস্থা দেখা যায়। হাতে গোনা দুই-একজন ক্রেতা ছাড়া পুরো পেঁয়াজের বাজারই অনেকটা ফাঁকা।
বিক্রেতারা জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা কম আসছেন। এর কারণে তাদের বিক্রি কমেছে।
আব্দুল মান্নান নামের এক বিক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতিদিন দুপুর ১২টার মধ্যে ২-৩ বস্তা (৮০ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করতাম, সেখানে আজ বিক্রি করেছি মাত্র এক বস্তা। দাম বেশি হওয়ায় মানুষ পেঁয়াজ কিনতে আসছে না। ক্রেতারা মনে করছে সামনে নতুন পেঁয়াজ আসবে, তখন কিনবে।
মজিদ উদ্দিন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ১৯৫ টাকা করে কেনা পেঁয়াজ ১৯০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতা নেই। সকাল ধরে ১০ কেজি পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারিনি।
পেঁয়াজের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে আনিছ নামের এক বিক্রেতা বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে ছিল। এখন নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমছে। ১৫ দিনের মধ্যে মুড়িকাটা নামের এই পেঁয়াজে বাজার ভরে যাবে। তখন দাম আরও কমবে।
এদিকে ক্রেতা না থাকায় অনেক বিক্রেতা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তেমনই একজন সালাম বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। তাই লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তার ওপর আবার ভোক্তা অধিদপ্তর এসে দুইশ টাকায় কেনা পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে। তাই পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখছি।
সালামের মতো এমন আরও অন্তত পাঁচজন বিক্রেতাকে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখতে দেখা যায়।
অন্যদিকে দাম বাড়ায় ক্রেতাদেরও পেঁয়াজ কেনা কমিয়েছেন। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শেখ তুহিন বলেন, আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাজারে প্রতিটা জিনিসের দাম বেশি। এখন আবার পেঁয়াজের দাম লাফ দিয়েছে। তাই পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনার ইচ্ছা নিয়ে এলেও কিনেছি মাত্র দুই কেজি।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করে তিনি বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের অভাব নেই। এগুলো সব আগের পেঁয়াজ। তারপরও দাম বাড়ছে। তারপরও যদি ১০ টাকা দাম বাড়ে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন ২০ টাকা।
ফয়েজুল হক নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সামনে নতুন পেঁয়াজ আসবে তাই এখন মাত্র দুই কেজি কিনেছি। খেতে তো হবে। কিন্তু আমাদের ক্রেতাদের সবার উচিত কিছু দিন পেঁয়াজ কেনা বন্ধ রাখা। তাহবে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে দাম কমাবে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে পাতাসহ পেঁয়াজের। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাতসহ পেঁয়াজ।
আজিজুর নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, পাতাসহ পেঁয়াজের দামও কেজিতে ২০ টাকা বাড়ছে। তবে তুলনামূলক এর দাম কম হওয়ায় নিম্নবিত্তরা এসব পেঁয়াজ কিনছে। চাহিদা বেড়েছে। দুইদিন আগে ২০ কেজি এমন পেঁয়াজ এনে বিক্রি করেছি। আজকে ৪০ কেজি এনেছি।