ঢাকা, বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

দেলদুয়ারের পাথরাইলের বান্দাবাড়ী যেন ভিন গ্রহের এক গ্রাম

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২০ জানুয়ারী ২০২২ ০৪:৩৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 

টাঙ্গাইল সদর থেকে দক্ষিনে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। টাঙ্গাইল-নাগরপুর-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে মাত্র ৫ শত মিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম বান্দাবাড়ী। গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে গ্রামবাসির একমাত্র চলাচলের কাঁচা রাস্তাটি। গ্রামের ১১০টি ঘরের ৪১৩ জন লোকের চলাচলের রাস্তাও এটি। নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। ২০২২ সালে এসেও মনে হয় দুই যুগ আগের বাংলার কোন গ্রাম যেন এটি।

পাথরাইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের এই গ্রামটির নাম ইউনিয়ন বোর্ডে লেখা আছে বান্দাবাড়ী। কেবল লেখা পর্যন্তই অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এই গ্রামের। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। সরকার আসে, সরকার যায়। বান্দাবাড়ী গ্রামবাসিদের আজো কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতে হয়। গ্রামের শিশুদের পড়ালেখা করতে পাশের ইউনিয়ন আটিয়ার গমজানী প্রাথমিক বিদ্যালয় না হলে ভুরভুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়। পাশের ইউনিয়নের গ্রামগুলোর রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রাম। বান্দাবাড়ী গ্রামবাসিদের কেবল মিলেছে প্রতিশ্রুতি। নিজ ইউনিয়নে পরবাসী যেন বান্দাবাড়ী গ্রাম।

গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গঞ্জের আলী বলেন, গ্রামের এক মাত্র কাঁচা রাস্তাটির সর্বশেষ উন্নয়ন হযেছিল ১৯৮৬ সালে। তৎকালিন চেয়ারম্যান আয়াত আলী খান বর্তমান চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি করে দিয়েছিলেন। তারপর আর কোন উন্নয়ন দেখেনি বান্দাবাড়ী গ্রামের লোক জন। তার জীবদ্দশায় কাঁচা রাস্তাটির উন্নয়ন দেখে যেতে পারবে কিনা তার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পাথরাইল ইউনিয়নের দক্ষিন-পশ্চিম সর্বশেষ অংশে গ্রামটির অবস্থান হওয়ায় নির্বাচন ব্যতীত কোন জনপ্রতিনিধি গ্রামে আসে না। তিনি এখন আর কোন জনপ্রতিনিধিকে গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে অনুরোধ করেন না। একই গ্রামের গৃহবধু ছালমা বেগম বলেন, তার এই গ্রামে বিবাহ হয়েছে প্রায় ১৪ বছর হল। নববধূ হিসেবে গ্রামে এসে যে অবস্থা দেখেছেন, আজ ১৪ বছর পর একই অবস্থা দেখছেন বান্দাবাড়ী গ্রামের। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে এই গ্রামে কেউ আসতে চায় না। সে সময় কোন রোগীকে গ্রামের এই রাস্তা দিয়ে বহন করে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। এই গ্রামের তরুণ যুবক সাদ্দাম হোসেন বলেন, গ্রামের উন্নয়নে কোন চেয়ারম্যান কিম্বা মেম্বার এখন পর্যন্ত নজর দেয়নি। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যও এই গ্রামের কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। বান্দাবাড়ী গ্রাম যেন ভিন গ্রহের কোন গ্রাম।

স্থানীয় নবনির্বাচিত মেম্বার আবুল কাশেম বলেন, তিনি সদ্য নির্বাচিত। তবে তিনি বান্দাবাড়ী গ্রাম ও রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা শুনেছেন। গ্রামটি ইউনিয়ন হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দীর্ঘ দিন হল উন্নয়ন বঞ্চিত। তিনি চেষ্টা করবেন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা-ঘাটসহ গ্রামের উন্নয়ন করার।

পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ সরকার জানান, গ্রামটি আসলেই উন্নয়ন বঞ্চিত। দীর্ঘদিন হল গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তার কোন উন্নয়ন হয়নি। বর্ষাকালে এই গ্রামের মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পরে। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই বান্দাবাড়ী গ্রামের রাস্তা পাঁকা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে গ্রামের ১ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটির স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (এলজিইডি) বিভাগ থেকে মাপ-ঝোক করে নিয়ে গেছে। আশা করি খুব দ্রুতই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বান্দাবাড়ী গ্রামের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা হবে।