ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

দেশী গরু-ভেড়া-হাঁসের জেনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন

আব্দুল কাইয়ুম,সাভার: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১০ অগাস্ট ২০২৩ ০৪:০৬:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

বেশি লাভের আশায় আমাদের দেশের চাষীরা বিদেশী বা হাইব্রিড জাতের গরু পালনে ঝুঁকছেন। এতে করে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের দেশীয় জাতের মীরকাদিম গরু। মীরকাদিম গরু খাবার খায় কম আর দুধ ও মাংস দেয় বেশি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই মীরকাদিম গরুর মাংস ও দুধ আরও বেশি করে উৎপাদন সম্ভব বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)-র গবেষকরা। শুধু দেশী এই গরুই নয়, দেশী ভেড়া ও হাঁস নিয়েও গবেষণা করে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন এনআইবির গবেষকরা।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে সাভারের আশুলিয়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের এই সফলতার কথা তুলে ধরেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

অচিরেই দেশী গরু ভেড়া ও হাঁস চাষে উদ্বুদ্ধ হবে দেশের চাষীরা। নিজস্ব সক্ষমতায় প্রথমবারের মত মুন্সীগঞ্জ ক্যাটেল বা মীরকাদিম গরু, দেশী ভেড়া ও হাঁসের পূর্ণাঙ্গ জেনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)-র গবেষকরা। সফলভাবে এই জাতগুলোর জেনোম এসেম্বলি এবং বিশ্লেষণও সম্পন্ন করেছেন তারা।

মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, চেষ্টা করলে বাঙ্গালীর কাছে অসাধ্য কিছুই নয়।  আমাদের ইয়াংগার সায়েন্টিস্টরাই কাজ করছেন, তাদের মধ্যে কোন দূর্বলতা নেই। সেজন্যেই আমরা তাদের ল্যাব তৈরী করে দিয়েছি। তারা দিনরাত কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ল্যাব দেখে আমরা আমাদের ল্যাব তৈরী করার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তরূণদের গবেষণায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার দেশের গরু ভেড়া হাসের যে আদি রূপ তা আমাদের জানতে হবে। তা জেনেই আমরা গবেষণা করব। আমরা যেন বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমার দেশের হাস, আমার দেশের গরু আমার দেশের ভেড়া। ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবা আমার ধারনা জিন থেরাপি নির্ভর হয়ে যাবে। ওষধ খাওয়ার আর দরকার পরবেনা। যেই জিনে সমস্যা সেই জিন পরিবর্তন করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

এই জিন গবেষণার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। তারা শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশের মীরকাদিম জাতটি ভারতীয় জেবু জাতের গরুর সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

এনআইবির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, আমাদের রোগমুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছুর পেছনেই জিন আছে। জীন নিয়েই কাজ করছি আমরা। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি এই সিকোয়েন্সিং এর উদ্বোধন করেছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী। রাতারাতি কিছু দেখাতে আমরা চাইনা। গবেষণা রাতারাতির বিষয় না। আমরা গবেষণা করছি, আমরা শিখছি আমরা আমাদের উদ্ভাবন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমরা হয়ত অনেক বড় কিছু উদ্ভাবন করিনি কিন্তু  আমাদের নিজস্ব সক্ষমতাই হল বড় কথা। আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা যে প্লাটফর্ম তৈরী করেছি এটা শুধু আমাদের জন্য না। এখানে সারাদেশের মানুষকে সেবা দেয়ার সুযোগ আছে।

তিনি আরও বলেন, দেশী জাতের গরু মীরকাদিম থেকে আরও বেশি পরিমাণে মাংস ও দুধ পাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। দরকারি জিন আমদের গবেষকরা চিহ্নিত করতে পেরেছে।

সংবাদ সম্মলেনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং এন্ড এনালাইটিকস এর প্রকল্প পরিচালক কেশব চন্দ্র দাস সহ এনআইবির অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। এই প্রকল্পের অধীনেই জিনোম সিকোয়েন্সিং এর কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।