রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন ''দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ যুব সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে, যাতে তারা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
তিনি আরো বলেন,“তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্ববাজারে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অবস্থান তৈরি করতে হলে মৌলিক গবেষণা ও এনিমেশনের বিকল্প নেই। সফটওয়ারে পাশাপাশি হার্ডওয়ার শিল্পের বিকাশ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
তিনি বুধবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কিশোরগঞ্জে “শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন,শিক্ষা ও কর্ম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত। শিক্ষার্থীরা এই সেন্টার থেকে সহজযোগ্য প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য তথ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন আমদানি যথেষ্ট নয় বরং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা ও গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে দেশে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল অর্থনীতি। আমেরিকা ইউরোপ কানাডা অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের প্রায় ৮৩ দেশের বেশি দেশেই বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে এবং এই খাতে রপ্তানি এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের অবদান পাঁচ শতাংশ উন্নীত হবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, করোনাকালীন দুঃসময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ও বিচার কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা ব্যাংকিং সেবা হয়ে পড়েছে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর এবং স্থানীয় বাজারে তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার লাভ করেছে।
করোনাকালে ই-কমার্স, বিশেষ করে অনলাইনে বেচাকেনা, ব্যবসার নামে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,তাই তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করে ই-কমার্স ও অনলাইন ব্যবসার প্রসার অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি ক্রেতাদেরও লোভনীয় অফার দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ার মানসিকতা পরিহার করারও আহ্বান জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা: সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম এসপিপি।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মো. জিল্লুর রহমান নানা শ্রেণি পেশার লোক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের অবকাঠামোর ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।