ঢাকা, বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাঁচলাইশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড ফুটপাত দখল, চুরি ও মাদকে নাকাল

মো. এনামুল হক লিটন, চট্টগ্রাম : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিএমপি’র সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পাঁচলাইশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড। ফুটপাত দখল, অবৈধ যানচলাচল, চুরি-ছিনতাই ও মাদক বানিজ্য এখানকার বড় একটি সমস্যা। অক্সিজেন মোড় কাঁচা বাজার হয়ে কয়লার ঘর পর্যন্ত এবং বঙ্গবন্ধু এভেনিউ সড়কের এয়ার আলী হাট (নয়ারহাট) ও আশপাশের এলাকায় ফুটপাত দখল করে ঝুঁপড়ি দোকান, ভাসমান হকার বসিয়ে অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস।

এছাড়া একই সড়কে মহানগরীতে চলাচল নিষিদ্ধ প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সি ও বিদ্যুৎ খেকো ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচল করছে সিন্ডিকেটের শেল্টারে। আইন প্রয়োগকারি সংস্থা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এবং অবৈধ যানচলাচল বন্ধে বারবার উদ্যোগ নিলেও ওই সিন্ডিকেট এবং দালাল চক্রের কারণে তা কোনোভাবেই পেরে উঠছে না।অন্যদিকে চুরি-ছিনতাই আর মাদকের আগ্রাসন নিত্যদিনকার। তবে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফি এসব বন্ধে বরাবরই সোচ্চার থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ওয়ার্ডের পশ্চিম শহীদ নগরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের উঠান বৈঠকের বক্তব্যে।

ওই উঠান বৈঠকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওয়ার্ডটির আয়তন ৬.৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা ৬৮,৭৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪,৭৫১ জন এবং মহিলা ৩৪,০৪৩ জন। মোট পরিবার ১৪,২৫১টি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উত্তরাংশে এই ওয়ার্ডের অবস্থান। এর উত্তরে ও পশ্চিমে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড এবং দক্ষিণে ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড ও পূর্বে ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডসহ হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন অবস্থিত।

ওয়ার্ডটির প্রশাসনিক কাঠামো হচ্ছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের প্রশাসনিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আওতাধীন এবং ২৮৫ নং চট্টগ্রাম-৮ জাতীয় নির্বাচনী এলাকার অংশ। এখানকার উল্লেখযোগ্য এলাকা জাঙ্গালপাড়া, হাজিপাড়া, আতুরার ডিপো ও অক্সিজেন। ওয়ার্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ি পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সাক্ষরতার হার ৬৪.৩%। এ ওয়ার্ডে ২টি কলেজ, ২টি মাদ্রাসা, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওয়ার্ডটিতে ঐতিহ্যবাহী এয়ার আলী মিয়ার হাট, চালিতাতলী বাজার, অক্সিজেন, আতুরার ডিপোসহ কয়েকটি বাজার। অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য শিল্প কারখানাও।

সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছ, ওয়ার্ডের জহির ষ্টোর সংলগ্ন জহির শাহ বাড়ির সড়কটি এখনো রয়ে গেছে, আধা কাঁচা এবং আরো কয়েকটি সড়কের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। ফলে বর্ষা মৌসুমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। জহির শাহ বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সমাজ সেবক মঞ্জুর আলম ও মোহাম্মদ মনসুর সড়কটি সংস্কারে কাউন্সিলরের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। এছাড়া ওয়ার্ডের আরো কয়েকটি এলাকার সড়কের অবস্থাও নাজুক। ওয়ার্ডে চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতাসহ মাদক ব্যবসায়ি ও সেবীদের উৎপাতের কথাও জানিয়েছেন কেউ-কেউ। অপরদিকে অবৈধ যান চলাচল, অবৈধ পাকিং, যানজট, ফুটপাত দখলসহ নানা বিশৃঙ্খলার কারণে যানজটের অভিশাপ থেকে বেরুতে পারছেনা অক্সিজেনসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল সরেজমিনে অক্সিজেন মোড় ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অক্সিজেন কাঁচা বাজার মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু এভেনিউ সড়কে নগরীতে চলাচল নিষিদ্ধ প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম সিরিয়ালের সিএনজি ট্যাক্সি চলছে প্রকাশ্যে বিনা বাধায়। এছাড়া আশপাশের অলি-গলিতে আরো দুই শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচল করছে বলে অভিযোগ করেছেন, স্থানিয় বাসিন্দারা।

অক্সিজেন কাঁচা বাজার মোড় থেকে শীতল ঝর্না আবাসিক এলাকা ও মাঝখানে কিছু পথ বাদ দিয়ে এয়ার আলী হাট (নয়ারহাট) পর্যন্ত সড়কে বসানো হয়েছে কাঁচা বাজার ও সবজির দোকান। একইসাথে ভাসমান হকার রয়েছে আরো  প্রায় পাঁচ শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকান ও ভাসমান হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিক চাঁদাও আদায় করছে একটি মহল। ফলে ব্যস্ততম এ সড়কটিতে সকাল থেকে রাত অবধি মুহুর্তে-মুহুর্তে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কবলে আটকা পড়ে গাড়িতে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা বিরক্তিকর সময় কাটাতে হচ্ছে অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজগামী যাত্রীদের। এতে করে মানুষের ভোগান্তি দিনদিন বেড়েই চলছে। কমে যাচ্ছে কাজের সময়ও। উপরন্তু নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গ্রাম সিরিয়ালের সিএনজি ট্যাক্সি ও ব্যাটারি রিক্সা পাকিং, মাঝ রাস্তায় যাত্রী উঠানামা করানোসহ নানা অনিয়মই এখানকার যানজটের মূল কারণ। অন্যদিকে অক্সিজেন মোড়ের দুই পাশের সড়কে অথ্যাৎ অক্সিজেন-মুরাদপুরমূখী ও অক্সিজেন-ষোলশহর ২নং গেইটমূখী টিকটিকি টেম্পুর অবৈধ ষ্টেশনে প্রায় ৫০ টিরও অধিক টেম্পু দাঁড়িয়ে যাত্রী হাঁকতে দেখা গেছে। এছাড়া অক্সিজেন কাঁচা বাজার মোড় থেকে কুয়াইশ সংযোগ সড়কে চলাচলরত গ্রাম সিরিয়ালের সিএনজি ট্যাক্সি চালকগুলো এ সড়কটি যেন তাদের বাপ-দাদার কেনা সম্পত্তি এমন ভাব প্রর্দশন করে কাঁচা বাজার মোড় থেকে দীর্ঘ আধা কিলোমিটার সড়কের উপর লম্বা সাড়িতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী হাঁকে তারা।

অপরদিকে কাঁচা বাজার থেকে শহীদ নগর সড়কে চলাচল করছে আরো শতাধিক চলাচল নিষিদ্ধ অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা। এসব রিক্সাগুলো কাঁচাবাজার মোড়ে ও অক্সিজেন লোহার পুল এলাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কারণে পূরো অক্সিজেন এলাকায় যানজট-বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। আশপাশের গার্মেন্টস ছুটি হলে, পোশাক কারখানার মহিলা শ্রমিকরা এসব পথ ধরে চলতে গিয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার ছাড়াও নানা ভোগান্তিতে পরে। এনিয়ে সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক বায়ান্ন ও চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দেনিক সাঙ্গু পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের বিভিন্নস্থানে চাঁদাবাজ ও দালালচক্রের তদবীর বানিজ্য ও দৌড়ঝাঁপ পরিলক্ষিত হয়। ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার স্থানিয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এক সময়ে এই ওয়ার্ডটি ছিল খুব অবহেলিত। বর্তমানে আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সার্বক্ষনিক ওয়ার্ডের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এসব সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশাবাদী ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এর আগেও কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম শফি এই ওয়ার্ডের তিন-তিন বার কাউন্সিলর ছিলেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বে ওয়ার্ডের অনেক উন্নয়ণ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান, স্থানিয় সমাজ সেবক ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফি ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ণে সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

ওয়ার্ডের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল এ প্রতিবেদক কাউন্সিলরের শরনাপন্ন হলে তিনি বলেন, চসিক মেয়রের নের্তৃত্বে চট্টগ্রামের উন্নয়ণ ও অগ্রগতির পথে যে যাত্রা তা আরো বেগবান করতে পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে চাই। এ লক্ষ্যে তিনি ওয়ার্ডবাসীর সহযোগীতা কামনা করে বলেন, কাউন্সিলর হিসেবে আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকা ঘুরে-ঘুরে পরিদর্শন করেছি এবং যেখানে সমস্যা ছিল সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি ওয়ার্ডের এয়ার আলী (নয়ারহাট) হাট সংলগ্ন কালারপোল এলাকার জনদূর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সেই সড়কটি দিয়ে যানচলাচলতো দূরের কথা মানুষের পক্ষে পায়ে হেটে পথচলা দায় হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়লে, আমি তাৎক্ষনিকভাবে রাস্তাটি সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ সম্পাদন করেছি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফি এলাকার অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।

এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা এবং চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করে পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ডটিকে ঢেলে সাজাতে এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ, মাদকমুক্ত, সুন্দর, আধুনিক ও নান্দনিক ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়ার্ডবাসীর সর্বাতœক সহয়োগীতাও কামনা করেছেন।