ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাইলটের মৃত্যুর পরও বিমানের অক্ষত অবতরণ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১২ মে ২০২২ ০১:১৮:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

 

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার আকাশে উড়ছিল লাল-সাদা রঙের একটি বিমান। আকাশযানটিতে এসময় ছিলেন মাত্র একজন যাত্রী ও পাইলট। হঠাৎ পাইলটের মৃত্যু হয়! এ অবস্থায় যেখানে বিধ্বস্ত হওয়ার কথা; সেখানে যাত্রীসহ অক্ষত অবস্থায় বিমানটি অবতরণ করে পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

অবাক করার মতো ঘটনা হলেও আদতে তা-ই ঘটেছে। মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

খবরে বলা হয়, একদিকে ভয়ঙ্কর, অন্যদিকে দারুণ একটি ঘটনা ঘটেছে ফ্লোরিডায়। সিসনা ২০৮ মডেলের একটি প্লেন রাজ্যটির আকাশে ওড়ার সময় সেটির পাইলটের মৃত্যু হয়। আকাশযানটি বিধ্বস্ত না হয়ে ফিরে এসেছে পাম বিচ বিমানবন্দরে। সাধারণ একজন যাত্রী সেটি অবতরণ করান। যদিও এর নেপথ্যে ছিলেন ২০ বছরের অভিজ্ঞ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ফ্লাইট প্রশিক্ষক রবার্ট মরগান।

অবাক করার মতো আরেকটি বিষয় আছে এ ঘটনায়। মরগান যে প্লেনটি আকাশ থেকে নেমে আসতে সহায়তা করেছিলেন, তিনি এর আগে কখনো সিসনা ২০৮ বিমানটি চালাননি। শুধুমাত্র বিমানটির ম্যাপের মাধ্যমে অনেকটা অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি।

কী ঘটেছিল মঙ্গলবার দুপুরে

বিবিসি বলছে, সিসনা ২০৮ মডেলের ওই প্লেনটি সাধারণত ফ্লাইট প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো সময় আকাশযানটির মাধ্যমে অল্প দূরত্বে যাত্রী আনা নেওয়াও করা হয়। ১০ মে কী ঘটেছিল তা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিন দুপুরের দিকে হঠাৎ এয়ার রেডিওতে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- আমার বিমান বন্ধ করে দেয়ার মতো কোনো ধারণা নেই। কেউ সাহায্য করতে পারবেন?

ঘটনার আকষ্মিকতায় অনেকটা পিলে চমকে যান পাম বিচ বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সদস্যরা। নাম না জানিয়ে ওই ব্যক্তি আবার বলেন, আমি খুব গুরুতর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। পাইলট অচেতন হয়ে পড়েছেন। হয়ত মারা গেছেন!

ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সদস্যরা রেডিওতে এ বার্তা পাওয়ার সময় সিসনা ২০৮ মডেলের প্লেনটি ভূমি থেকে ৯ হাজার ফুট (২ হাজার ৭৫০ মিটার) ওপর দিয়ে উড়ছিল। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি আবার বলেন- আমার কোনো ধারণা নেই কী হতে যাচ্ছে। আমি শুধু সামনে ফ্লোরিডা উপকূল দেখতে পাচ্ছি।

এ সময় বিরতিতে যাচ্ছিলেন রবার্ট মরগান। কিন্তু ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর শুনে তিনি ফ্লাইট কন্ট্রোলিংয়ে বসে পড়েন। বিমানে থাকা লোকটিকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। বলেন, আপনি চেষ্টা করুন যেন বিমানের পাখা দুটো যেন সমান থাকে। উপকূল অনুসরণ করার চেষ্টা করুন, আমরা আপনাকে শনাক্তের চেষ্টা করছি। আপনি উত্তর বা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যান।

বিমানে থাকা ব্যক্তি এ সময় বলেন, আমিতো নেভিগেশন স্ক্রিনটি চালু করতে পারছি না। এতে কী সব তথ্য আছে? আপনারা জানেন? আমি জানি না কীভাবে বিমানটি থামাবো! কীভাবে কী করে আমি কিছুই জানি না।

ফ্লাইট প্রশিক্ষক মর্গান তার অন্যান্য সহকর্মীদের শান্ত ও সতর্ক থাকার কথা বলেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানের ককপিটে থাকা ম্যাপ খুঁজে দেখতে বলেন। ডব্লিইউপিবিএফ টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মর্গান বলেন, আমি শুধু জানতান প্লেনটি অন্যসব সাধারণ বিমানের মতোই উড়ছে। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। আকাশে থাকা বিমানটির কন্ট্রোল যার কাছে ছিল, তাকে কীভাবে রানওয়েতে নামিয়ে আনা যায়, সেটি ভাবছিলাম।

মৃত পাইলট নিয়ে আকাশে উড়তে থাকা বিমানটির ওই যাত্রীকে মরগান অল্প সময়ে শিখিয়েছিলেন কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে খুব ধীরে বিমানটিকে নামিয়ে আনা যায়। ধীরে ধীরে প্লেনটি নেমেও আসে। মরগান বলেন, আমি ভাবছিলাম এরপর কী হবে। এর মধ্যেই শুনতে পেলাম তিনি বললেন, ‘আমি অবতরণ করেছি’। তখন চিন্তা করলাম কীভাবে এক জায়গায় বসে থেকে বিমানটিকে আমি থামাবো!

বিবিসির খবরে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত কোনো ক্ষতি ছাড়াই বিমানটি অবতরণ করে। পরে মরগান ও ওই যাত্রী একে অপররের সঙ্গে দেখা করে আলিঙ্গণ করেন। অন্যান্য পাইলটরা

ফ্লাইট প্রশিক্ষক মরগানকে বীর বলে প্রশংসা করেন।

সিএনএন’র খবরে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা স্বার্থে বিমান যাত্রী, এমনকি মৃত পাইলটের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, সিসনা ২০৮ মডেলে বিমানটি কানেকটিকাট রাজ্যের একটি ঠিকানায় ‘ব্যক্তিগত’ হিসেবে নিবন্ধিত ছিল। ফ্লাইট ট্র্যাকার সংস্থা ফ্লাইট অ্যাওয়ার জানিয়েছে, বিমানটি ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা আগে বাহামাসের মার্শ হারবার থেকে উড্ডয়ন করেছিল।