ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাওনা টাকা চাওয়ায় চা দোকানিকে গরম পানিতে ঝলসে দিলেন 'আওয়ামী লীগ নেতা'

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৭ মার্চ ২০২২ ১০:২২:০০ পূর্বাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
লক্ষ্মীপুরে গরম পানি ছুড়ে আলমগীর হোসেন নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী চা দোকানির শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে। দোকানের পাওনা টাকা চাইলে জহির আহম্মেদ রিপন ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি এ ঘটনা ঘটান। রবিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের কাজীর দীঘিরপাড় বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
 
 
আহত আলমগীর রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাইচা গ্রামের বাসিন্দা ও কাজীর দীঘিরপাড় বাজারের চা দোকানি। প্রায় ১৮ বছর তিনি বাজারটিতে ব্যবসা করছেন।
 
অভিযুক্ত রিপন ভূঁইয়া সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হামছাদী গ্রামের একরাম উদ্দিন ভূঁইয়াবাড়ির তোফায়েল আহমেদ লেদু ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি নিজেকে 'আওয়ামী লীগ নেতা' দাবি করে স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটান।
 
জানা যায়, আলমগীর বাসচালক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি বাম পা (পায়ের গোড়ালি) হারান। এরপর তিনি কাজীর দীঘিরপাড় বাজারে পান-সিগারেট বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ১৮ বছর হয়েছে তিনি চা দোকান দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে রিপন ভূঁইয়া প্রায়ই দোকানে এসে চা-সিগারেটসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে টাকা দেন না। টাকা চাইলে পরে দেবেন বলে চলে যান। মাঝে মাঝে দলবল নিয়ে এসে খেয়ে চলে যান। এর পর থেকে আর তার বাকির হিসাব রাখা হয় না।
 
 
এদিকে রবিবার সন্ধ্যায় দোকানে এসে রিপন চা-সিগারেট নেন। চা-সিগারেট পান করা শেষে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে ডেকে আলমগীর টাকা চান। কিন্তু রিপন টাকা দেবেন না বলে জানান। পরে তাকে আলমগীর দোকানে না আসার জন্য বলেন। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে গ্যাসের চুলার ওপর থাকা গরম পানিসহ চায়ের কেটলি তিনি আলমগীরের শরীরে ছুড়ে মারেন। দ্বিতীয় কেটলি ছুড়ে মারার সময় আলমগীর তা হাত দিয়ে ধরে ফেলেন। এতে তার হাত, হাঁটু, পিঠ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
 
রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। রিপনের জেঠাতো ভাই ও কাজীর দীঘিরপাড় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, 'ঘটনাটি আমি শুনেছি। আলমগীরকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাব।'
 
উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, 'পাওনা টাকা চাইলে চা দোকানি আলমগীরের সঙ্গে রিপনের বাদানুবাদ হয়। আমি তখন রিপনকে বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চা দোকানির শরীরে গরম পানির কেটলি ছুড়ে মারেন। এতে আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। রিপন নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে নেই।'
 
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, মুঠোফোনে বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া কঠোরভাবে। 
.