গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার সরকার পতনের পর দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডিসহ সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়ে যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করে নিরাপত্তা আতঙ্ক।
গতকাল রাত সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ৪৯ তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়াত ইকবাল মৃধা ৫০ তম ব্যাচের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করেন। এর বিচারের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসে উপস্থিত হয়। তবে প্রক্টরিয়াল বডির সকলে একযোগে পদত্যাগ করায় এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য না থাকায় বিচারকার্য নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসময় উপাচার্যের দায়িত্ব পালনরত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রশাসকহীন এই অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের জন্য ক্যাম্পাসকে অনিরাপদ বোধ করছেন বলে জানায়।
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রুশনাত রামিসা বলেন, প্রশাসনিকহীন এই অবস্থা আমাদের জন্য বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাসকে অনিরাপদ করর তুলেছে। এই অনিরাপদ ক্যাম্পাসে আমাদের সাথে যেকোনো কিছু ঘটলেও যারা দায়িত্ব নিয়েছে তারাও দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে৷ আমরা চাই দ্রুত এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সকল দায়িত্বশীল পদে নিয়োগ দেয়া হোক। পাশাপাশি এই ক্যাম্পাস থেকে অবশ্যই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
লোকপ্রশাসন ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান প্রীতি বর্তমানের ক্যাম্পাসকে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ বলে দাবি করে বলেন, ‘'আমি বাংলাদেশের ছোট একটা শহর থেকে উঠে এসেছি। আমার কাছে একসময় ক্যাম্পাস ছিল সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসনের ব্যর্থতায় নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠে। এমনকি মেয়েদের জন্য হলেও নিরাপত্তাশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু এখন আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসক না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ জানানোর আর কোনো উপায় নেই। গতকালের ঘটনাটি আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে পুনরায় হুমকির মুখোমুখি করছে। আমরা চাই দ্রুত ক্যাম্পাসের দায়িত্বশীল সকল পদে নিয়োগ দান করে আমাদের ক্যাম্পাসকে পুনরায় নিরাপদ করা হোক।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘গত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পরবর্তীতে দুজন সহ উপাচার্য এবং ট্রেজারর পদত্যাগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শূন্যতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীসহ পুরো ক্যাম্পাসের সবার জন্য চরম এক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ধরনের প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনিক পদসমূহে অনতিবিলম্বে যোগ্য, সৎ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দেয়া জরুরি। এছাড়াও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের সকল অংশীজনকে নিজের ও ক্যাম্পাসে বসবাসকারী সকলের, বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, দেশের বর্তমানে ক্রান্তিকাল চলছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করেছে। ফলে একটা নিরাপত্তাশঙ্কার তৈরি হয়েছে। তবে যতদিন না অব্দি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি না হয় ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সকলে মিলে সকলের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে এবং নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সকল সহকর্মীকে নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। সকলের প্রতিনিয়ত খোজখবর রাখা উচিত। এতে আমরা কিছুটা হলেও এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হব।