বগুড়ায় বোরো ধানের মাঠে মাঠে এখন কৃষককের ব্যস্ততা। শুরু হয়েছে ধান কাটা মাড়াই। অনেক কৃষক আবার ঝড় বৃস্টির মুখে লোকসানের শঙ্কায় তড়িঘরি করেই ধানকাটা শুরু করেছেন। তবে ধানের বাজার কৃষকদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার নিয়ে কৃষকরা খুশি। তারা বলছেন, এবার উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বর্তমান বাজার দরে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন না। ব্যবসায়ীরা বলছে গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাজার বেশি।
বগুড়া কৃষি বিভাগ জানায়, এবার চলতি বোরো মৌসুমে বগুড়ায় এবার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে গেছে। গত সপ্তাহে ঝড় বৃস্টি অনেক জমির ফসল নুইয়ে পড়লেও এটা ক্ষতির প্রভাব ফেলেনি। আবার ঝড় বৃস্টির শঙ্কায় অনেকে ধান কাটতে তড়িঘরি করছেন। কৃষি বিভাগের হিসাবে অনুযায়ি ধানকাটা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। ঈদের পর পুরোদ্দমে ধানকাটা মাড়াই মৌসুম শুরু হবে। এখন নিচু এলাকার জমিসহ যারা আগাম ধান লাগিয়েছিলেন তারা ধান কাটছেন। জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, আদমদিঘী,গাবতলি ও শেরপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত বেশি ধান কাটা হয়েছে। এবার জেলায় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধরাণ করা হলেও আবাদ এবং উৎপাদন দুটোই ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগ বলছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের রওশান আলী ফটিক ৮ বিঘা জমিতে জিরাশাইল ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ মন ধান পেয়েছেন। তবে তিনি জানান, ধানের বাজার ভালো হলেও এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তেমন লাভ না পেলেও তাদের লোকসান হবে না। তিনি ১ হাজার ২০ টাকা মণে ধান বিক্রি করছেন। তিনি জানালেন, গত বছর বিঘা প্রতি জমির ধান কাটতে মজুরী ছিলো ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার এবার তা বেড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজারে পৌঁছেছে। ধানকাটা মাড়াইয়ের শ্রমিক সর্দার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই গ্রামের হান্নান জানালেন, তারা একই গ্রাম থেকে ২২ জন মথুরাপুর ধান ক্ষেতে কাটামাড়া করছে বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে। এই দিনমজুর দলের রাসেল আহম্মেদ লেখাপড়া সঙ্গে মজুর হিসাবে ধানকাটা মাড়াইেেয়র কাজ করেন। বাবা অসুস্থ্য, কলেজ বন্ধের ফাঁকে দিন মজুর দলের সঙ্গে কাজ করছেন সংসারে যোগান দিতে। তিনি জানালেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান মজুরীতেও তাদের তেমন ভালো অবস্থা নেই। মজুর দলের কর্মীদের বক্তব্য- যাতায়াত ও অন্যান্য খরচের পর তাদের হাতে তেমন কিছু থাকে না। এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড়ধানের মোকাম রনবাঘা বাজারের ধান ব্যবসায়ী জানালেন, কাটা মাড়াই মৌসুমের শুরু হলেও ধানের সরবরাহ ভালো। প্রতিদিন এখানে ৫০/৬০টি ট্রাক ঝোঝাইধান কেনাবেচা হচ্ছে। তবে ঈদের কারণে চাতাল ও মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভেজা ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন। নন্দীগ্রামের দাতমানিকা গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন জানালেন, ১০ বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছেনে ২০ থেকে ২২ মন করে। তিনি জানালেন, গত বছরের চেয়ে এবার ধানের দাম প্রায় থেকে দেড় শ’টাকা বেশি। ধানের ব্যবসায়ী মেজবাউল জানালেন, প্রতিমণ ভেজা ধান ৯শ থেকে কে ১০০০ এবং শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১১শ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় মৌসুমের এই সময়ে বর্তমানে ধানের বাজার দর উর্দ্ধমুখী
বগুড়া কৃষি বিভাগে জানিয়েছে, এখন আগাম লাগানো বোরোর বিভিন্ন ধানের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিঘা প্রতি এখন পর্যন্ত গড় উৎপদান ২২/২৩ মণ। বগুড়া কৃষি সম্প্রসরাণ বিভাগের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জাানান, এবার ধানের উৎপাদন ও বাজার দুটোই ভালো। তবে ঈদের পরে পুরোদ্দমের ধানকাটা শুরু হলে বিঘা প্রতি উৎপাদনের আরো সঠিক তথ্য জানা যাবে।