সরকারি চাকরিতে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। থাকছে না এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন)। সেখানে আসছে কর্মভিত্তিক নতুন অনলাইন মূল্যায়ন ব্যবস্থা এপিএআর (অ্যানুয়াল পারফরমেন্স অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট-বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন)।
এজন্য ‘বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুশাসনমালা, ২০২২’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে চলছে সফটওয়্যার তৈরির কাজও।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন-মর্জির ওপর নির্ভর করে অধস্তনদের মূল্যায়ন। সেভাবে বিবেচনায় আসে না কর্মদক্ষতার বিষয়টি। তাই এসিআরের ভিত্তিতে পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা অনেক সময়ই সঠিকভাবে মূল্যায়িত হন না। সরকারও সঠিক পদের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে পারেন না। মূলত এপিএআর ব্যবস্থায় এসব সমস্যা দূর হবে।
খসড়া অনুশাসনমালা অনুযায়ী, এটি হবে সফটওয়্যারভিত্তিক কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা। মূল্যায়নের মূল ভিত্তি হবে কর্মকৃতি বা পারফরমেন্স। সিস্টেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিবেদন প্রণয়নে সহায়তা করবে। বছরের শুরুতে কর্মকর্তারা কর্মপরিকল্পনা দেবেন। বছর শেষে নিজেই করবেন নিজের কাজের মূল্যায়ন। মূল্যায়নে নম্বরের ভিত্তিতে থাকবে পাঁচটি গ্রেড। উচ্চতর কর্মকৃতি দেখানো ‘এ-প্লাস’ ও ‘এ’ গ্রেড পাওয়া কর্মকর্তাদের জন্য থাকবে প্রণোদনা। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) সঙ্গে নতুন এ ব্যবস্থা সমন্বয় করা হবে। এই ব্যবস্থায় সচিব ও এর উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হবে এপিএ’র মাধ্যমে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ (সিপিটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সহিদ উল্যাহ বলেন, ‘এখন কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন এনালগ পদ্ধতিতে হয়। এসিআরের কাগজের ফরম পূরণ করে দিয়ে থাকি, প্রযুক্তিনির্ভর নয়। কিন্তু আমরা যেটা করতে চাচ্ছি সেটা ওয়েব বেইজড হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন এসিআর ব্যবস্থায় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত কিছু প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হয়। তাদের পারফরমেন্স মূলত এতে প্রতিফলিত হয় না। কর্মের মূল্যায়ন বর্তমান ব্যবস্থায় সেভাবে নেই। এখন আমার ঊর্ধ্বতন কর্মপক্ষ আমার প্রতি ধারণা থেকে মূলত আমাকে মূল্যায়ন করে থাকেন।’
‘এপিএআরে আমরা একজন কর্মকর্তাকে মূল্যায়নের বিষয়টি দুটি ভাগে বিভক্ত করেছি। ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে ৪০ নম্বর এবং পারফরমেন্স বা তিনি যে কাজ করেন সেটার ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ৬০ নম্বর। এই প্রথমবারের মতো কর্মকর্তাদের পারফরমেন্সটাকে সামনে আনা হচ্ছে।’
নতুন এই মূল্যায়ন ব্যবস্থার সঙ্গে এপিএ-কে (বার্ষিক কর্ম সম্পাদক চুক্তি) যুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওখান থেকে একটা নম্বর এসে এখানে (এপিএআর) যোগ হবে। এটাকে কেন্দ্র করে একজন কর্মকর্তার একটা প্রোফাইল তৈরি হবে, চাকরি জীবনে তিনি কেমন পারফর্ম করে আসলেন এটার ওপর ভিত্তি করে এটা হবে। এই প্রোফাইলটা দেখে আপনি তাকে মূল্যায়ন করতে পারবেন। তার পদায়ন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটা কাজে দেবে। এটা দেখে বোঝা যাবে তিনি কোথায় ভালো করেছেন, কোথায় ভালো করেননি।’
‘এখন এসিআরটা যাদের জন্য প্রযোজ্য এপিএআরটাও তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এখন বেতন কাঠামোর নবম গ্রেড থেকে এর উপরের পদের কর্মকর্তাদের এসিআর দিতে হয়। আমরা এটা এসিআরের বিকল্প হিসেবে তৈরি করছি।’
সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এতদিন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারাই অধস্তনদের মূল্যায়ন করতেন। নতুন ব্যবস্থায় যে কর্মকর্তা মূল্যায়িত হবেন। তিনি বছরের শুরুতেই কর্মপরিকল্পনা করবেন যে, এই বছর আমি এই কাজগুলো করবো। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে এটা তিনি অনুমোদন করিয়ে নেবেন। বছরের মাঝখানে কোনো কাজ আসলে, নতুন কোনো কাজ যুক্ত করার জন্য এই পরিকল্পনাটি রিভিউ করা যাবে।’
বছর শেষে কিন্তু কর্মকর্তারা নিজেই নিজের কাজ মূল্যায়ন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্ব-মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে ভালো নম্বর পেলে, সেটা দিয়ে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের নম্বর প্রটেক্ট করা যাবে, সেটা নতুন ব্যবস্থায় থাকছে।’
তিনি বলেন, ‘যিনি পরিকল্পনাটি করবেন, আমরা বলেছি, তার কমপক্ষে ১২টি কাজ থাকতে হবে। এই মৌলিক কাজগুলো উল্লেখ করা আছে। প্রত্যেকটি কাজের নম্বরের সীমা হবে ২ থেকে ৮, তবে সাধারণভাবে নম্বর হবে ৪। বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সর্বোচ্চ নম্বর ৮-ও দেওয়া যাবে।’
এই ব্যবস্থায় প্রশাসনে বড় একটি গুণগত পরিবর্তন আসবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমরা এখন খসড়া অনুশাসনমালার বিষয়ে মতামত নিচ্ছি। ভালো মতামত পেলে সেটা যুক্ত করে খসড়াটি সংশোধন হতে পারে। এরপর এটি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে যাবে। আমরা আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি সচিব কমিটিতে পাঠাতে পারবো। অনুশাসনমালা হয়ে গেলে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো মডিউল নিয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের একটা প্ল্যাটফর্ম করতে চাচ্ছি। এপিএআর হচ্ছে অনেকগুলো মডিউলের মধ্যে একটি। সবগুলো উইংয়ের জন্য মডিউল হবে, মোট ৭/৮টা হতে পারে।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘এপিএআর মডিউলটার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ কোটি টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। টাকা পেলে আরও লোকজন নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত তিনজন প্রোগ্রামার কাজ করছেন। অফিস ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আইসিটি অধিদপ্তর, আইবাস, কম্পিউটার কাউন্সিলের সহায়তা নিচ্ছি।’
যা আছে খসড়া অনুশাসনমালায়
‘বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুশাসনমালা, ২০২২’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের বস্তুনিষ্ঠ কর্মমূল্যায়নের উদ্দেশ্যে ফলাফলমুখী কার্যসম্পাদনগত নিরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়নসহ তাদের জন্য অধিকতর আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বহুমুখী কর্মমূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তনই বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য।
এপিএআরএ কোনো কর্মচারীকে ১০০ নম্বরের মধ্যে মূল্যায়ন করা হবে। এর মধ্যে তার কর্মকৃতি মূল্যায়নের জন্য ৬০ নম্বর এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত বৈশিষ্ট্য মূল্যায়নের জন্য ৪০ নম্বর নির্ধারিত রয়েছে। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য ২০ ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের জন্য ২০ নম্বর। প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য সর্বোচ্চ নম্বর ৪।
সরকারি চাকরি আইনের অধীন বেতন কাঠামোর গ্রেড-৯ থেকে গ্রেড-২-এর সরকারি কর্মচারীদের কর্মকৃতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এপিএআর ব্যবহৃত হবে জানিয়ে এতে বলা হয়, গ্রেড-১ ও এর উপরের পর্যায়ের কর্মচারীদের এপিএআর ফরম তৈরি, পূরণ, দাখিল করতে হবে না। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাদের কর্মমূল্যায়ন করা হবে।
এপিএআর একটি অনলাইন সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সিস্টেমটি সরকারি অন্যান্য অনলাইন সিস্টেমের সঙ্গে প্রয়োজনে যুক্ত করা হবে। কর্মকৃতি মূল্যায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত মূল্যায়নাধীন, মূল্যায়নকারী ও প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মচারীর এই সিস্টেমে একটি করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থাকবে। এপিএআর সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দাপ্তরিক অ্যাকাউন্ট থাকবে।
সিস্টেমটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনাধীন থাকবে। তবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের কর্মচারীদের এপিএআর ব্যবস্থাপনা করবে।
প্রত্যেক কর্মচারী তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে মন্ত্রণালয়/বিভাগ বা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রশাসনিক ইউনিটের তালিকা থেকে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট নির্বাচন করে ওই ইউনিটের জন্য একটি এপিএআর ফরম তৈরি করবে। কেউ ফরম তৈরি না করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
সিস্টেমে সন্নিবেশিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এপিএআর ফর্মে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং এপিআর পূরণ ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। এছাড়া কর্মকৃতির জন্য প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ সংক্রান্ত বিভিন্ন গণনা সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে।
মূল্যায়নাধীন কর্মচারী তার সম্ভাব্য কাজের তালিকা এবং প্রতিটি কাজের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা, প্রমাণক ও সর্বোচ্চ নম্বর সম্বলিত কর্মপরিকল্পনা অর্থবছর শুরু বা যোগদানের ১৫ দিনের মধ্যে মূল্যায়নকারীর কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবেন। মূল্যায়নাধীন কর্মচারীর প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা মূল্যায়নকারী অনুমোদন করবেন। তিনি নতুন কোনো কাজকে এই কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ও কোনো কাজকে নাকচ করতে পারবেন।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় মোট কাজের সংখ্যা কমপক্ষে ১২টি ও কাজগুলোর মোট নম্বর কমপক্ষে ৬০ হতে হবে। কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত কাজের মোট নম্বরের সীমা সর্বোচ্চ ১০০ হবে।
সাধারণভাবে কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত কোনো কাজের সর্বোচ্চ নম্বর হবে ৪। তবে কোনো কাজের গুরুত্ব, প্রভাব, পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনা করে সর্বোচ্চ নম্বর ২ থেকে ৮ পর্যন্ত প্রস্তাব করা যাবে। কোনো কাজের সর্বোচ্চ নম্বর ৪-এর কম বা বেশি প্রস্তাব করা হলে এর যৌক্তিকতা উল্লেখ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সিনিয়র সচিব, সচিব পর্যায়ের ব্যক্তিদের এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোর প্রধান ও বিভাগীয় কমিশনারদের একান্ত সচিব এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের সহকারী একান্ত সচিবদের ৬টি কাজ মূল্যায়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- গোপনীয় বিষয়াদি ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণকারীর দর্শন/পরিদর্শন ও ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত কর্মচারীদের পরিচালনা, যোগাযোগ ও সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণকারীর সময়সূচি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণকারী নির্দেশ প্রতিপালন।
অনুশাসনমালায় কর্মকৃতি মূল্যায়ন, প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন, উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও সেবা সহজীকরণের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
যদি মূল্যায়নাধীন কর্মচারী কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ কাজের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কর্মকৃতি প্রদর্শন করেন তবে তাকে ব্যক্তিগত ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের জন্য ৪০-এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৮ নম্বর দিতে হবে। কমপক্ষে ৪০ শতাংশ কাজের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কর্মকৃতি প্রদর্শন করলে ব্যক্তিগত ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের জন্য ৪০-এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৭ নম্বর দিতে হবে এবং ৩৫-এর ক্ষেত্রে ৩৬ নম্বর দিতে হবে।
মূল্যায়নাধীন কর্মচারী তার এপিএআর ফরমে প্রতিটি কাজের বিপরীতে অর্জন, প্রমাণক, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে প্রাপ্ত নম্বর নিজেই দেবেন। তবে অনুশাসনমালায় যদি ভিন্ন কোনো কর্মচারীর মূল্যায়নের নির্দেশনা থাকে তবে সেটা প্রযোজ্য হবে। প্রতিটি কাজ সম্পাদনের তারিখ কর্মচারীকে এপিএআর ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
মূল্যায়নাধীন কর্মচারীর স্ব-মূল্যায়নের সঙ্গে মূল্যায়নকারী একমত হতে পারেন বা দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তিনি দ্বিমত পোষণ করলে মূল্যায়নাধীন কর্মচারীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
কোনো কর্মচারীর কর্মকৃতি এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের জন্য মূল্যায়নকারীর দেওয়া নম্বর যোগ হয়ে ‘মূল্যায়নকারী কর্তৃক প্রদত্ত নম্বর’ নির্ধারিত হবে। এই নম্বরের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন কর্মচারীর এপিএআরে প্রাপ্ত গ্রেড নির্ধারিত হবে।
৯৬ থেকে ১০০ নম্বর পেলে ‘এ-প্লাস’, ৮৫ থেকে ৯৫ নম্বর পেলে ‘এ’, ৭৫ থেকে ৮৪ নম্বর পেলে ‘বি’, ৬৬ থেকে ৭৫ নম্বর পেলে ‘সি’ এবং ৬৫ বা কম পেলে ইমপ্রুভমেন্ট রিকোয়ার (আইআর) গ্রেড হবে।
উচ্চতর কর্মকৃতি প্রদর্শন করায় ‘এ প্লাস’ বা ‘এ’ গ্রেড প্রাপ্ত কর্মচারীরা প্রণোদনা পাবেন। ‘এ-প্লাস’ ও ‘এ’ গ্রেড পাওয়া কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিব যৌথভাবে স্বাক্ষরিত প্রশংসাপত্র পাবেন। নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওয়েবসাইটে ‘এ-প্লাস’ ও ‘এ’ পাওয়া কর্মচারীর ছবি প্রকাশিত হবে।
আইআর, সি ও বি গ্রেড পাওয়া কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতিকার প্রযোজ্য হবে। প্রতিকার প্রদানের উদ্দেশ্যে কোনো কর্মচারীকে ভবিষ্যতে উৎকৃষ্ট কর্মকৃতি প্রদর্শনের জন্য গড়ে তোলা। প্রতিকারের বিস্তারিত বিবরণ খসড়া অনুশাসনমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।