চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ। যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করে তিন মাস আগে চূড়ান্ত হয় খসড়া তালিকা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘উদাসীনতায়’ তা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ২৫০ কোটি টাকা ফেরত যেতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বরাদ্দ অর্থ ফেরত দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩২ হাজার ৪১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য নয় হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নতুন স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য ২০০ কোটি আর কারিগরি-মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের মধ্যে এমপিওভুক্তির কাজ শেষ করতে পারেননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে যে সময় রয়েছে তার মধ্যে তালিকা প্রকাশ করলেও এমপিওভুক্তি হওয়া শিক্ষকদের এর আওতায় আনতে যাচাই-বাছাই কাজ শেষ করতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় প্রয়োজন। আগামী ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। তাই নিয়ম অনুযায়ী চলতি অর্থবছর এ খাতের বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই হাজারের কিছু বেশি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির কাজ গত বছরের শেষ দিকে শুরু হয়। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৭শ, স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ১৫০টি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ প্রায় ১০০ এবং ডিগ্রি স্তরের কলেজ প্রায় ১০০টি। মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অধীনে ঠিক কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে তা জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসের প্রথমার্ধেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষামন্ত্রী তালিকা চূড়ান্ত না করায় সেটি পিছিয়ে গেছে। এমপিওভুক্তির সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেওয়ার পরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে তিনমাস ধরে শিক্ষামন্ত্রী এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০১৯ সালে সবশেষ দেওয়া এমপিওভুক্তির পর ওই খাতে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা অব্যয়িত ছিল। সেটা ২৫০ কোটি টাকার সঙ্গে যোগ করে এমপিওভুক্তি করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন নবী ডলার বলেন, আমাদের বিষয়টি মানবিক হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি কার্যক্রমে বিলম্ব করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবছর এমপিওভুক্তি করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
‘যুগের পর যুগ শিক্ষকতা করেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকে হতাশ হয়ে পেশা বদলে ফেলছেন। সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা না থাকায় প্রতিবছর বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা আবারও ফেরত যাচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতনসহ দেশের সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখা থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ৩২ হাজার ৪১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৮৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের মতো এবারও এমপিওভুক্তির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
বাজেট শাখার উপসচিব মো. নূর-ই আলম বলেন, বর্তমানে যে সময় রয়েছে তাতে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করলেও চলতি বছরের বরাদ্দ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না। তবে এ অর্থবছরে যারা এর আওতায় আসবে তাদের বেতন-ভাতার অর্থ আগামী অর্থবছরের বাজেটে যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা এমপিওভুক্তির জন্য ধার্য ছিল। বর্তমানে সেটি অর্থ বিভাগে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আগামী বছরের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বাজেটের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরিতে আমাদের কাজ শেষ হয়েছে। সেটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
চলতি অর্থবছরের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ৯ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হলেও সেটি পাস হতে হতে জুলাই হয়ে যাবে।
‘আশাকরি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে সরকার যে বাজেট দিয়েছে সেটি ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আগামী জুলাইয়ের আগে আমাদের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। চলতি বছরের বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে। আগামী বছর নতুন বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে অসুবিধা হবে না।’