সিলেটের জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকের পরও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সোমবার থেকে জেলা পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার ব্যাপারে অনড় বলে জানিয়েছেন তারা।
সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবিতে সোমবার সকাল ৬ টা থেকে ৪৮ ঘন্টার এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট আহ্বানের প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে সংগঠনটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। বৈঠকে ধর্মঘট থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। তবে এই বৈঠক শেষে ধর্মঘট থেকে সরে না আসার ঘোষণা দেন ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, পাথর উত্তোলনের দাবির প্রেক্ষিতে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর এই কমিটির সদস্যরা সিলেটের কোয়ারিগুলো পরিদর্শনে আসবেন। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখবেন পাথর উত্তোলনের যৌক্তিকতা আছে কি না। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, আজকের বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের আমি এ কথা জানিয়েছি। মন্ত্রানলয়ের প্রতিনিধিদের সা্থে দেখা করে তারা যাতে নিজেদের দাবি জানাতে পারেন এই সুযোগ করে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছি। তারা এখানে বৈঠকে ধর্মঘট থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন। তবে এখান থেকে যাওয়ার পর বলছেন, তাদের অনেকেই নাকি ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মানছে না।
জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে কোন সমাধান হয়নি জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচী চালিয়ে যাবো।
এদিকে, কর্মবিরতি পালন উপলক্ষে মালিক-শ্রমিকদের এক যৌথ সভা রোববার দুপুরে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দিলু মিয়ার সভাপতিত্বে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদের পরিচালনায় সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সহ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজির আহমদ স্বপন, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন তালুকদার, বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আমিন, জাফলং স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সহ সভাপতি সৈয়দ সালেহ আহমদ শাহনাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নুল হক, জৈন্তাপুর বেলচা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলী আকবর, সাধরণ সম্পাদক কামাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, শ্রমিক নেতা বিলাল আহমদ, আব্দুল মতিন ভিআইপি প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় দশ লক্ষাধিক মানুষ রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর কোয়ারী সংশ্লিষ্ট এলাকা সমূহে বর্তমানে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এবং দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিকালে রোজগার বঞ্চিত সিলেটের লাখ লাখ মানুষ। পাথর পরিবহণে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ট্রাক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শত শত ট্রাক মালিক, স্টোন ক্রাশার মালিক ও ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছেন। অথচ, পাথর কোয়ারী বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানী করে উন্নয়ন কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে। লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের পাথর কোয়ারী জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেয়া আবশ্যক।