সীমান্তে শিশু হত্যা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে আধিপত্যবিরোধী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ’।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে মশাল হাতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে চলমান সকল ভারতীয় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দেবে জনগণ, ‘চলবে না চলবে না, সীমান্ত হত্যা চলবে না,’ বিএসএফের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও,’ ‘ভারতীয় দালালেরা, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল নাইমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব। আহসান লাবিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল নামক একটি বিষফোড়া রাষ্ট্র আছে, যারা কোনো রাষ্ট্রকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। ঠিক একইভাবে দক্ষিণ এশিয়াতেও একটি বিষফোড়া রাষ্ট্র আছে আর সেটি হচ্ছে ভারত। এই ভারতও তার আশেপাশের কোনো রাষ্ট্রকে শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের সাথে তাদের বিরোধিতাপূর্ণ সম্পর্ক। বাংলাদেশকে তারা বারবার বন্ধু রাষ্ট্র বলে আসলেও এমন কোনো আগ্রাসন নেই যা তারা বাংলাদেশের প্রতি করে নাই। আগে বাংলাদেশে যে ভারতের তাঁবেদারি করা স্বৈরাচারী সরকার ছিল সেই সরকার উৎখাত হয়েছে, এখন বাংলাদেশে ছাত্র জনতার সরকার রয়েছে। ভারত যদি নতুন কোনো আগ্রাসন চালাতে চায় তাহলে এই ছাত্রজনতার সরকার তাদেরকে যথাযথ জবাব দিবে। বাংলাদেশের সীমান্ত বিএসএফের দ্বারা যে পরিমাণ মানুষ হত্যা করা হয়েছে পৃথিবীর অন্য কোথাও এরকম কোনো নজির নেই। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিগত ১৫ বছরে কোনো সীমান্ত হত্যার বিচার বাংলাদেশে করা হয় নাই। আমরা বর্তমান ছাত্র জনতার সরকারকে অনুরোধ করবো যাতে এসব সীমান্ত হত্যার বিচার করা হয় এবং ভারতকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো ভারতীয় আধিপত্যবাদ মেনে নিবে না।’
সমাপনী বক্তব্যে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার বলেন, ‘কিছুদিন আগেই ভারত পানি সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের ওপর আগ্রাসন চালায়। এরপরেই পুনরায় মৌলভীবাজার সীমান্তে স্বর্ণা দাস নামক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করেছে। ভারতীয় সীমান্ত অন্য আর পাঁচটি দেশের সীমান্তের মতো নয়। এখানে চলে ভারতের এক পাক্ষিক রাজত্ব। গত পনেরো বছরে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ভারতীয় বিএসএফ বাহিনী। সামনে আর এমন আধিপত্যবাদী আচরণ মেনে নেয়া হবে না। এরপর বাংলাদেশের ওপর যখনই কোনো আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বা যে কোনো ধরনের আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করবে আমরা বাংলার আপামর জনগণ সেই প্রচেষ্টাকে রুখে দিব। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংসের জন্য ভারত যে নীল নকশা করেছিল তারই অংশ জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের প্রকল্প চলছে। যে কোনো মূল্যে ভারতের কোনো প্রকল্প জাহাঙ্গীরনগরে এমনকি বাংলাদেশের কোথাও হতে দেওয়া হবে না।’