আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মিথ্যাচার তাদের একমাত্র সম্পদ। মিথ্যাকে পুঁজি করে তাঁরা আজকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তাঁকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়।’
রবিবার দুপুরে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুুদ্ধের সংগঠক আব্দুল জলিল স্মরণে আয়োজিত শহরের নওজোয়ান মাঠে স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুল জলিলের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘন্টায় তিন ঘন্টা ঘুমান। বাকি ২১ ঘন্টা তিনি ঘুমান না। রাত জেগে কাজ করেন। সারা দিন বসে বসে দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। শেখ হাসিনা বিদেশে যান আনন্দ করার জন্য না। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ^ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যান নাই। তিনি বিদেশ সফরে গেছিলেন বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য। অথচ তার সফর নিয়ে ফখরুল মুখে বাধে না, যা ইচ্ছে তাই বলেন। মিথ্যাচার তাদের একমাত্র সম্পদ। মিথ্যাকে পুঁজি করে তাঁরা আজকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তাঁকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘বিএনপির দেখতে দেখতে ১৪ বছর চলে গেছে। ১৫ বছরে পা দিয়েছে। আন্দোলন হয় না। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। তার মানে জনগণ না থাকলে, পাবলিক না থাকলে আন্দোলন হয় না। পাবলিক নাই বিএনপির আন্দোলন নাই। বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। ৫২ দফা ভুয়া, ২৭ দফা ভুয়া। বিএনপির ৫৪ দল ভুয়া। তাঁদের আজকে বড় জ¦ালা। পদ্মা সেতু হয়ে গেল। মেট্রোরেল চালু হলো। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। কিছু দিন লোডশেডিং হয়তো থাকবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির অন্তরজ¦ালা কমবে না। নালিশ করতেই থাকবে।’
জ¦ালাণি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির জন্য বিশ^ পরিস্থিতি দায়ী বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বিশে^ আজকে স্যাংকশন, যুদ্ধ, নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে স্থিতিহীন করে তুলেছে। জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, এটা শুধু আমাদের নয়, সারা বিশে^র সমস্যা। বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে। একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাধারণ মানুষকে। আমাদের আজকে এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নয়। এই কষ্টের জন্য দায়ী আজকে বিশে^র সংকটজনক পরিস্থিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে জ¦ালানির যে সহযোগিতা পেয়েছেন সেটা আমাদেরকে সংকট থেকে সামনের দিনগুলিতে উদ্ধার করবে। আপনাদের কাছে চামচাগিরি করব না। যা সত্য তাই বলব। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা শান্তিতে নেই। আজকে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ নেই। এই বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাঁকে নেতা বানিয়েছি।’
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জানুয়ারিতে নির্বাচন করতে পারেনি। ফেব্রুয়ারিতে পারেনি। মার্চ, এপ্রিল, মে মাসেও পারিনি। জুনেও পারবে না। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, নভেম্বরেও পারবে না। ডিসেম্বরেতো নির্বাচন। তখন হবে ফাইনাল খেলা।’
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনীতিক বয়সে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তাঁর মতো নেতৃত্ব আর কাউকে পাইনি।’
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। স্মরণসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
স্মরণসভায় যোগদানের আগে বেলা ১১টায় নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ এলাকায় আব্দুল জলিলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও আওয়ামীলীগের নব-নির্মিত দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের ও দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।