মুখে বিরোধিতা করলেও ভিতরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি গণসংযোগ শুরু করেছেন। চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণাও। ডিজিটাল ব্যানার, বিলবোর্ডসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে নানা রঙের পোস্টার প্রদর্শন জানান দিচ্ছে তাদের নির্বাচনী তৎপরতা। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বন্ধ নেই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ এলাকায় আগাম প্রস্তুতি কার্যক্রম। কোরবানি ঈদ ঘিরেও বেশির ভাগ নেতা সাজিয়েছেন নিজের এলাকায় নানা কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, বিএনপি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এ দল কখনোই নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়। তবে বিএনপি এবার সেই নির্বাচনে যেতে চায়, যে নির্বাচনে জনগণ তাদের নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। এ জন্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, মির্জা ফখরুল সাহেব যতই চোখ রাঙান-না কেন, আপনার দলেই তো আপনাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনারা মুখে মুখে নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও তলে তলে আপনার দলের নেতারা ঠিকই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাম্প্রতিক তিনটি সিটি নির্বাচনে ১৩৪ জন বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুরেই নিয়েছেন ২৯ জন। এর জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিও নির্বাচন করতেই চায়, তবে সেই নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সারা দেশে ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী বাছাই কাজও শুরু করেছে আরও আগে থেকেই। ২০১৮ সালের মতো এবার একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত প্রার্থীর হাতেই মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতির কোনো অভাব নেই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আজকে প্রতিষ্ঠিত হলে বিএনপি কালকেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। জানা গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি দুটোই একসঙ্গে চালাচ্ছে দলটি। বাইরে আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে পুরোদমেই চলছে ভোটের প্রস্তুতি, যাতে যে কোনো মুহূর্তে বিনা চাপে ভোটে অংশ নিতে পারে। এ জন্য ৩০০ আসনেই প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। নানা মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করছে হাইকমান্ড। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা ধরে দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানা ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার মৌখিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নির্বাচনী বড় ‘প্ল্যান’ নিয়েই এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপি। চূড়ান্ত করা হচ্ছে আগাম প্রস্তুতি।
৩৬ দলও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের : সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি ছাড়াও আরও ৩৬টি রাজনৈতিক দল রাজপথে রয়েছে। তারা চারটি প্ল্যাটফরমে আলাদা মোর্চা গঠন করে বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। মোর্চাগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই সমমনা দলগুলো নিয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। অন্যদিকে ১২টি দলের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’। আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সমমনা দলগুলো আগামী নির্বাচনের আসন ভাগাভাগির বিষয়েও যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের নিজ নিজ আসনের মনোনয়ন আগেভাগেই নিশ্চিত করতে দেন-দরবারও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।