ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে নতুন রূপে তৈরি হচ্ছে পুরাতন কালীবাড়ি মন্দির, দোকান নয়।

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:২১:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের রায়ে নতুন রূপে তৈরি হচ্ছে মৌলভীবাজারের পুরাতন কালীবাড়ি মন্দিরের জায়গায় মন্দির। দোকান নয় এটি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নে আমি সচেষ্ট থাকবো বলে মতামত প্রকাশ করেন মৌলভীবাজারে নবাগত জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। বুধবার ৩০ আগস্ট ২০২৩ ইং বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মৌলভীবাজার শহরে অবস্থিত কালী বাড়ির নির্মাণ কাজসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম  সভায় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় সভাপতি সকলকে স্বাগত জানিয়ে সভার কাজ শুরুতে উপস্থিত সকলের পরিচয় প্রদান করেন।
এ সময় মৌলভীবাজার শহরে অবস্থিত শ্রী শ্রী পুরাতন কালী বাড়ির নির্মাণ কাজ সম্পর্কে আলোকপাত করার জন্য উপস্থিত সদস্যবৃন্দকে অনুরোধ করা হলে সদস্যগণ নিম্নবর্ণিতভাবে তাদের বক্তব্য রাখেন, সভায় মনবীর রায়, সভাপতি, কার্যকরী কমিটি, শ্রী শ্রী পুরাতন/নতুন কালী বাড়ি, মৌলভীবাজার বলেন একই কমিটির মাধ্যমে পুরাতন ও নতুন কালী বাড়ি পরিচালিত হয়। পুরাতন কালী বাড়ির জরাজীর্ণ দোকান ও মন্দির ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। নির্মাণ কাজের জন্য হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ১৫ (পনেরো) লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দ প্রাপ্তির পর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। মন্দিরের ঢালাইয়ের কাজ সমাপ্ত হলে কতিপয় ব্যক্তির জাপত্তির কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মৌলভীবাজার সদর কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে প্রেক্ষিতে অদ্যাবধি কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সদয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কাজ আরম্ভ করতে আগ্রহী মর্মে জানান। মনবীর রায় এর বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে দেবতোষ সিংহ চৌধুরী, সহ সভাপতি, কার্য নির্বাহী কমিটি, শ্রী শ্রী পুরাতন কালী বাড়ি, মৌলভীবাজার: মহিম দে, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, শ্রী শ্রী পুরাতন কালী বাড়ি, মৌলভীবাজার, আশুতোষ দাশ, সহ সভাপতি, কার্য নির্বাহী কমিটি, শ্রী শ্রী পুরাতন কালী বাড়ি, মৌলভীবাজার জানান যে, মায়ের মন্দির হউক সেটা সবাই চায়। মন্দিরে পূর্বেই দোকান ছিল, বর্তমানেও দোকান রেখেই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে নীচে দোকান রেখে উপরে কালী মন্দির স্থাপনের নকশা করা হয়। দোকান নির্মাণের কারণে প্রতিপক্ষের আপত্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে যে সিদ্ধান্ত হবে সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মন্দিরের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
সভায় রনধীর বায় কানু বলেন একই কমিটির মাধ্যমে পুরাতন ও নতুন কালী বাড়ি পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন কালী বাড়ি কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। দোকানের ভাড়ার টাকা মন্দিরের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বর্তমানে মন্দিরের জায়গা মাত্র ০৩ শতক। মন্দিরের জায়গায় দোকান ভাড়া দেয়া হলে মন্দিরের পূজা অর্চ্চনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের অপসারণে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তিনি মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণের বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করার ব্যাপারে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে মর্মে সভাকে অবহিত করেন তিনি সর্বশেষ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হতে প্রাপ্ত নির্দেশনা মোতাবেক মন্দিরের নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন। রনধীর রায় কানু-এর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে এডভোকেট পীযূষ কান্তি সেন, এডভোকেট দীপ্তেন্দু দাশগুপ্ত কাজল, এডভোকেট প্রদীপ দাশ, এডভোকেট রুনু দত্ত (রনজু) জানান যে, পুরাতন কালী বাড়ির মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হলে তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং মন্দিরের ভাব- গাম্ভীর্যতা বজায় থাকবে।
এদিকে সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহিত হয়- ১.শ্রী শ্রী পুরাতন কালী বাড়ির অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, ২.মন্দিরের পূজা অর্চনার কার্যাদি ২য় তলায় সম্পন্ন হবে, ০৩. মন্দিরের নীচ তলা মন্দিরের কাজে ব্যবহৃত হবে, কোন দোকান থাকবে না।
মন্দিরের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মৌলভীবাজার কে আহবায়ক করে সভায় উপস্থিত উভয় পক্ষের সদস্যবৃন্দের সমন্বয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যা উক্ত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। আহ্বায়ক,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মৌলভীবাজার, সদস্য মনবীর রায়, সভাপতি, নতুন কালী বাড়ি, আশুরঞ্জন দাশ, সহ সভাপতি, শ্রী শ্রী নতুন কালী বাড়ি, দেবতোষ সিংহ চৌধুরী, সহ-সভাপতি, শ্রী শ্রী নতুন কালী বাড়ি,এডভোকেট পীযূষ কান্তি সেন, এডভোকেট, দীপ্তেন্দু দাশগুপ্ত কাজল, মহিম দে, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, শ্রী শ্রী নতুন কালী বাড়ি, রনধীর রায় কানু, নকুল চন্দ্র দাশ, সদস্য, শ্রী শ্রী নতুন কালী বাড়ি, এডভোকেট রুনু দত্ত (রনজু), প্রদীপ দাশ, এডভোকেট, মৌলভীবাজার পরিশেষে সভায় আর কোন আলোচনা না থাকায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার ৩১ আগস্ট ২০২৩ ইং, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত একটি রেজুলেশন পাঠানো হয় যাহার স্বারক নং ০৫,৪৬,৫৮০০,০০৫,১৩,০০২,২২,.৫৭৪। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, ড. উর্মি বিনতে সালাম শ্রী শ্রী পুরাতন কালিবাড়ি মন্দির পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রভাংশু সোম মহান।
এ বিষয়ে এডভোকেট দীপ্তেন্দু দাশগুপ্ত কাজল বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে হিন্দু ট্রাস্টের রায় মৌলভীবাজারের পুরাতন কালীবাড়িতে মন্দিরের জায়গায় মন্দির হবে এখানে কোন দোকান কোটা হবে না। এই দোকান কোটা নিয়েই একটি বিভাজন সৃষ্টি হয়। যাহোক জেলা প্রশাসক মহোদয় এর হস্তক্ষেপে আমরা উভয় পক্ষের মধ্যে একটি দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পেরেছি। সবকিছুই মা কালীর ইচ্ছে। আলোচনা সভায় আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রভাংশু সোম মহান মহোদয়কে আহবায়ক করে উভয় পক্ষের পাঁচ জন পাঁচ জন করে ১০ জন করে মোট ১১জন দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি আমি আশা রাখি যেন যত তাড়াতাড়ি কালী মায়ের মন্দির হবে। এবিষয়টি সমাধান হওয়ায় সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে শ্রী শ্রী নতুন কালী বাড়ি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম দে বলেন, আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি যে হিন্দু ট্রাস্টের রায়ে মৌলভীবাজারের পুরাতন কালীবাড়িতে মন্দিরের জায়গায় মন্দির হবে। মন্দির নিয়ে তো কোন দ্বিমত ছিলনা। আমরা প্রথমেই বলেছি এখানে জায়গা স্বল্পতা তাই দুতলায় মন্দির হবে। পূর্বেই মন্দিরের পাশে দোকান কোটা ছিল তাই দোকান কোটা বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা তো কখনো মন্দিরে বিপক্ষে ছিলাম না। যাহোক আমরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিনের সমস্যাটি সমাধান হওয়ায় সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মন্দির নির্মাণের কাজটি শেষ করতে পারি কালী মায়ের ইচ্ছা ও সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এবিষয়ে এডভোকেট রুনু দত্ত (রনজু) বলেন,আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে হিন্দু ট্রাস্টের রায় মৌলভীবাজারের পুরাতন কালীবাড়িতে মন্দিরের জায়গায় মন্দির হবে এখানে কোন দোকান কোটা হবে না। এই দোকান কোটা নিয়েই একটি বিভাজন সৃষ্টি হয়। যাহোক শেষ পযর্ন্ত জেলা প্রশাসক মহোদয় এর হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আলোচনা সভায় আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রভাংশু সোম মহান মহোদয়কে আহবায়ক করে উভয় পক্ষের পাঁচ জন পাঁচ জন করে ১০ জন করে মোট ১১জন দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
উল্লেখ’ মৌলভীবাজারে কালী মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণের আদেশ দিয়ে রবিবার ১৯ মার্চ সচিব( উপসচিব) কৃষ্ণন্দু কুমার পাল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পত্র জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের রায়েও এলাকাবাসীর দাবি প্রতিফলিত হলো। সেখানে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে , মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন কালীবাড়িতে মন্দির নির্মাণ করতে হবে। কোন অবস্থায় দোকান কোঠা নির্মাণ চলবে না।
এর আগে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের আওতায় মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ মন্দিরের জায়গায় শুধুমাত্র মন্দির নির্মানের জন্যই ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তার ব্যত্যয় ঘটেছিল।
“সারা দেশে সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার শীর্ষক প্রকল্প” এর আওতায় শুধু একতলা বা দ্বিতল মন্দির নির্মানের নির্দেশনা থাকলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেছে মৌলভীবাজারে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা শহরের পুরাতন কালীবাড়ি মন্দির প্রায় ১৪০ বছরের পুরনো । ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের নতুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে। সূচনা লগ্নে ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটির কারণে কমিটির নির্মাতারা উদাসীন থাকায় নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার দেখে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা রাজ সরকার উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কাজ বন্ধ করেন এবং প্রশাসনিক নির্দেশ মোতাবেক ছাদ ঢালাই ভেঙ্গে পুনরায় ছাদ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বিগত ২৭ অক্টোবর ২০২২ ইং, বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজার পুরাতন কালী মন্দির নির্মাণে সৃষ্ট সমস্যা গুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন তিনি।