ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের মানববন্ধন ঘিরে তোলপাড়

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৫২:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের ডাকে আয়োজিত মানববন্ধনে পুলিশের বাধায় পণ্ড হওয়ায় জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। দেশ ও প্রবাস থেকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন জেলাবাসীর সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা না দিয়ে বরং সহযোগিতা করতে পারতো। বুধবার দুপুরের ওই ঘটনার পর জেলা শহরের সবার মুখে মুখে মানববন্ধনে পুলিশি বাধা ও সদর সরকারি হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। জেলার সচেতন মহল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জানা যায়, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন থেকে বয়ে চলা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধনে পুলিশি বাধায় পড়ে জেলার কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন। বুধবার দুপুরে  মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব চত্বরে জেলা স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন শুরুর আগে থেকেই পুলিশ বাধা দেয়।
 
এ সময় স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের  নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাক-বিতণ্ডা হয়। পুলিশের বাধায় স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজকর্মীরা মানববন্ধনের পূর্ব-নির্ধারিত স্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। জেলার একাধিক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান-  মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর  জেনারেল হাসপাতালে বয়ে চলা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ঘোষণা দিয়ে গেল কয়েকদিন থেকে প্রচার-প্রচারণা চালান তারা। মঙ্গলবার বিকাল থেকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
 
কেন ওই কর্মসূচি প্রত্যাহার বা বন্ধ করতে হবে- এমনটি জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন- বিরোধী দলের কর্মসূচি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব করা যাবে না বলে অজুহাত দেন।
 এক পর্যায়ে পুলিশের অনুমতি নেয়ার বিষয়টিও জানান। তাদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান- তারা রাজপথে কোনো বিশৃঙ্খলার জন্য এই কর্মসূচি দেননি। বরং দীর্ঘদিন থেকে এজেলার সর্বস্থরের স্বাস্থ্য সেবাগ্রহীতারা  জেলা শহরের এই সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। ওখানে এসে তারা উল্টো নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারিত হচ্ছেন। রোগী, তাদের স্বজন ও ভুক্তভোগীদের এমন আহাজারি ও অনুরোধ এবং ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার এমন বাস্তবিক করুণ দৃশ্য দেখে তারা সবার মতামতের ভিত্তিতে এমন কর্মসূচি নিয়েছেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন- ওইদিন পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য আগের দিন থেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়। তাছাড়া পূর্বঘোষিত মানববন্ধনের স্থানে তাদের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে বাধা দেয়। ব্যানার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা বলেন- পুলিশি বাধায় অন্যত্র সংক্ষিপ্তভাবে মানববন্ধন ও পথসমাবেশের কাজ শেষ করতে বাধ্য হন। তাদের অনেক নেতাকর্মী কর্মসূচিস্থলে আসার আগেই তা শেষ করা হয়।
 
পরে তারা কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সংকট নিরসন, বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সচল করা, আউটডোর-ইনডোরের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি বন্ধ করাসহ হাসপাতালের ভেতরের সিন্ডিকেট বন্ধ ও পরিষ্কার-পরিছন্নতার দাবিতে   জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজকর্মী অধ্যাপক মো. ইকবাল, এম. মুহিবুর রহমান মুহিব, নজরুল ইসলাম কয়ছর, রুহেল আহমদ চৌধুরী, শেখ ফারুক আহমেদ, ইহাম মোজাহিদ প্রমুখ।
স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন- মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটসহ নানা সংকটে জর্জরিত। এ কারণে জেলার ২৫ লাখ মানুষ প্রতিনিয়তই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৬টি চিকিৎসক পদশূন্য, রোগ নির্ণয়ের অনেকগুলা মেশিনই নষ্ট।  প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকা।  ভেতর ও বাহিরে অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশ। রোগীদের নিম্নমানের খাবার সাপ্লাই। ওষুধ না পাওয়া। মর্গ হাউজের নানান সংকট ও সমস্যা। বিভিন্ন টেস্টের ক্ষেত্রে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠা এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম। পুলিশের বাধার কারণ জানতে চাইলে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াসিন রাসেল গণমাধ্যমকর্মীদের জানান- অনুমতি না থাকায় তারা মানববন্ধন করতে পারেননি।