- গহীন পাহাড়ে র্যাব-১৫ এর অভিযান
- মূলহোতা রাসেল সহ গ্রেফতার ৭
- ৮ অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও ইয়াবা উদ্ধার
কক্সবাজারের উখিয়ার গহীন পাহাড়ের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত রাসেল ও তার ৬ সহযোগীকে অস্ত্র ও ইয়াবা সহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকার তেলখোলা বটতলী পাহাড় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় কথিত রাসেল বাহিনীর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় আটটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ২০ হাজার পিস ইয়াবা।
আটককৃতরা হলো, শেখ রাসেল, মোহাম্মদ ছলিম, নুরুল আমিন, কায়সার উদ্দিন, ছাদেক, সাহাব উদ্দিন ও নুরুল হাকিম। তারা সবাই উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক বলেন, " ডাকাত দলটি উখিয়া ও টেকনাফের গহীন পাহাড়ী এলাকায় আস্তানা গড়ে তুলে মূলহোতা ডাকাত রাসেলের নেতৃত্বে খুন, অপহরণ, ডাকাতি ও দুস্যতা, চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু ব্যবসা, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করতো।"
এসময় র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, " স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধ কর্মকান্ড চালানোর পাশাপাশি সংরক্ষিত বন থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন করে আসছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ১৫ মামলার আসামী রাসেল ও তার সহযোগীরা।"
জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ না করলেও এই কর্মকর্তা জানান," তদন্তে কোন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তবে স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই জনপ্রতিনিধি হলেন পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
রাসেল র্যাবের জালে ধরা পড়ার দিন তিনেক আগে থেকেই নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন না তিনি। তাঁর এলাকায় না থাকাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার কৌশল বলছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, " চেয়ারম্যানের আশ্রয়েই শক্তি বাড়ায় রাসেল, অপরাধ করতে গড়ে তোলে নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী। আশ্চর্যের বিষয় গফুর চেয়ারম্যানকে কয়েকদিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তার কারণে তিনি অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন, সেটি স্পষ্ট। "
তবে মুঠোফোনে গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। ঢাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে আগামী সপ্তাহে এলাকায় আসবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাসেলকে পৃষ্ঠপোষকতার কথা অস্বীকার করেন আলোচিত এই চেয়ারম্যান৷ তিনি বলেন, " রাসেলের সাথে আমারো পারিবারিক বিরোধ আছে, তাকে কেনো আমি আশ্রয় দিবো? সে এক পার্টি করে আমরা এক পার্টি করি। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। "
দ্রুত বিচার আইনের মামলা সহ ১৮ টি মামলার আসামী গফুর উদ্দিন চৌধুরী। আদালত কতৃক চারটি ফৌজদারি মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি মাসের শুরুতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের ক্রাইম জোন হিসেবে খ্যাত পালংখালীর চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
সেসময়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শরীফা আহমেদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয় - চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় দায়েরকৃত জিআর মামলা, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা ও উখিয়া থানার অপর এক মামলায় দেয়া অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৪(১) মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঐ পরিপত্রে আরো বলা হয়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন থাকায় তার দ্বারা কোনো প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থি।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকা তেজগাঁও থানায় দায়ের করা একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামী হওয়ায় সাবেক ইউপি সদস্য শেখ হাবিবুর রহমানের পুত্র রাসেল বাহিনীর কথিত প্রধান রাসেল উখিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো বলে জানা গেছে।
গ্রেফতার হওয়া রাসেল ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে র্যাব আরো জানায়, অভিযানের সময় রাসেল বাহিনীর আরও তিন সহযোগী পালিয়ে যায়, যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বিভিন্ন সময় এই বাহিনীর হাতে পুলিশ, বিজিবি ও ফরেস্ট গার্ডরা হামলার শিকার হয়েছে।