ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে বিরোধপূর্ণ জায়গা ক্রয়কে কেন্দ্র করে ইউএনও-এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২০ মার্চ ২০২২ ১১:৩৫:০০ পূর্বাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য মালিকানা ও বিরোধপূর্ণ জায়গা কেনা ও হুমকি দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জায়গার মালিক।
 
বুধবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা শহরের একটি পত্রিকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
 
অভিযোগকারী জাহাঙ্গীর রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড শিবপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলী ভূঁইয়ার ছেলে।
 
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার চাচা বেলাল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে ৯৬ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে আমার। জমিটির দাম প্রায় ৮০ লাখ টাকা। অথচ বিরোধীয় এ জমিটি রায়পুর ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য কিনতে আমার চাচার সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করেন। এতে আমার চাচা ওই জায়গা থেকে গাছ কাটার জন্য চেষ্টা করেন। এতে আমি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করি। ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়পুর এসি ল্যান্ড ও থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।’
 
‘এ ছাড়া আগামী ১৮ মে পর্যন্ত ওই জমিতে কোনো কাজ যেন না করা হয়, তার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ পেয়ে রায়পুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম উভয় পক্ষকে এ বিষয়ে নোটিশ দিয়েছেন।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে মামলার দিন রায়পুর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে মামলার কাগজপত্র আদালত থেকে পাঠানো হয়। কাগজপত্র পেয়েই এসিল্যান্ড রাসেল ইকবাল মুঠোফোনে আমার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, “মামলার কাগজে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নেই। মিথ্যা মামলা দিয়ে বেলালকে হয়রানি করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জমি কেনার বিষয়ে সব কথাবার্তা শেষ পর্যায়ে। এ জমি নিয়ে কোনোভাবেই আপনি বাধা দেবেন না।
 
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘এ সুযোগে বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বিরোধীয় জমি থেকে বেলাল গাছ কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে আমি গিয়ে বাধা দিই। এ সময় বেলাল ফোন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সহকারী রাব্বী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে আসেন। তারা এসে আমাকে হুমকি দেন। 
 
একপর্যায়ে রাব্বী তার মোবাইলফোন দিয়ে ইউএনও অনজন দাশের সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেন। তখন ইউএনও হুমকি দিয়ে বলেন, “গাছ কাটতে বাধা দিয়েছেন কেন?” এতে আমি আদালতের নির্দেশনার কথা জানালে ইউএনও বলেন, “জমিটি আমরা ক্রয় করেছি। জমি দখলে যাওয়ার পর টাকা লেনদেন করব। যদি বাধা দেন তাহলে আপনাকে (জাহাঙ্গীর) গ্রেফতার করানো হবে। আপনার বিভিন্ন ধরনের বিপদ হবে। বাড়িছাড়া হতে হবে।”’
 
পরে জাহাঙ্গীর অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ইউএনও জোরপূর্বক জমিটি আমার চাচাকে দখল করে দেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছেন। আমাকে তিনি বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে এখন আমার আতঙ্কে দিন কাটছে।
 
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল  বলেন, জমিটি নিষ্কণ্টক। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য আমরা জমিটি কিনব। সব কথাবার্তা সম্পন্ন হয়েছে। মামলা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। আশা করি দ্রুত এটি নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু জাহাঙ্গীর জমি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। আর তাকে আমি কোনো হুমকি দিইনি। তার সঙ্গে আমার কোনো কথাও হয়নি।
 
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। গাছ কাটায় সমস্যা সৃষ্টি হলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানতে পারি। জাহাঙ্গীরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।