সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে নদী ভাঙ্গনে বিলীন অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি। নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন আগ্রাসনে ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক পরিবার। ভাঙ্গন তীব্রতায় ঝুঁকিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক। যেকোনো সময় সেতু ধসে বিচ্ছিন্ন হতে পারে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় আরো শতাধিক বসতবাড়ি হুমকির মুখে। এছাড়া স্থানীয় মন্দির সহ বেশকিছু স্থাপনাও রয়েছে হুমকির মুখে। নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চান স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামে নদী ভাঙ্গনে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্রামের একদিকে নাগডরা হাওর, আরেক দিকে নাইন্দা নদী। মাঝখানে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সদরপুর সেতু। এই সেতুর দুই দিকেই হাওর-নদীর মধ্যখানে সদরপুর গ্রামের মানুষের বসবাস। গত বন্যার পর থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের ভিটা বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবারগুলো আত্মীয়র বাড়িতে বা নিজেদের শূন্য ভিটায় খুপরি ঘর বানিয়ে কোনো রকমে থাকছেন। নাইন্দা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের। অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে আরও অসংখ্য ঘরবাড়ি, সড়ক, শ্মশান, মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ২০০৪ সালের বন্যার পর থেকে উপজেলার নাইন্দা নদীর সদরপুর এলাকার ভাঙ্গন শুরু হয়। দীর্ঘ ১৯ বছরের অব্যাহত ভাঙ্গনে পুরো গ্রাম এখন বিলীনের পথে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র অবস্থান করছেন। ২০২০ সাল ও ২০২২ সালের বন্যার পর থেকে নাইন্দা নদীর ভাঙ্গনের আগ্রাসন কয়েকগুণ বেড়েছে। ভাঙ্গন তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক। ধসে গেছে সড়কের সদরপুর সেতুর দুইপাশের পাঠাতন ও এপ্রোচ। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো সেতু। সারা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। দানব নদীর ভাঙ্গন দিনকেদিন ভয়াবহ রূপ ধারন করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
নদীভাঙ্গণে পতিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাথী রানী দেব, কলেজ পড়ুয়া দীপ্ত দেব, মুসলিম আলী, মনির হোসেন সহ অনেকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তারা খুবই কষ্টে সময় পার করছেন, তারা বলেছেন কয়েকটি পরিবার জায়গা খরিদ করে অন্যত্র বাড়ি করে গেছেন, আমাদের টাকা নাই বিদায় একাখে খুপরী ঘর করে আছি এবং খুব চিন্তায় সময় পার করছি। বিত্তবান ব্যক্তিরা ও সরকারে সাহায্য যদি আমরা পাই খুবই উপকৃত হব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শামছুদ্দোহা বলেছেন ভাঙ্গন রোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন সিলেট- সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের সেতুটি ১৯৭৯-১৯৮২ সময় কালে নির্মান করা হয়,সেতুটি নির্মান কাজের সময় ৩টা স্পেনে এবং দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার, কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে এখানে চ্যানেলের প্রশস্ততা প্রায় ১০০ মিটারের অধিক, সে কারণে ব্রীজটি চ্যানেলের প্রশস্ত অপেক্ষা কম হওয়ার কারণে ব্রীজের দুই পার্শে যে এভার্টম্যান চ্যানেলের মধ্যে ডুকে গিয়েছে, এবং এর ফলে প্রতি বছরের বন্যার কারণে দেখা যাচ্ছে এভার্টম্যান সংগলগ্ন মাটি স্কাওয়ার হয়ে ওয়াশা আউট হয়ে যায়, সে কারণে যানবাহন চলাচলের জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। এবং আমরা ইতিমধ্যে সেটুটি দুই প্রান্তেই আলাদা ভাবে বেলী সেতুর সংযোগ স্থাপন করেছি, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন না হয়। আমরা আসংখা করতেছি যে এ বছর বন্যায় স্কাওয়ার হয়ে ব্রীজটা আরও ঝুকিওপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে, সে কারণে জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং এর মাধ্যমে ব্রীজের গোড়াতে কিছু রক্ষাপদ কাজ হাতে নিয়েছি। এই ব্রীজের পার্শে নতুন ব্রীজ নির্মানের জন্য প্রস্তাব করেছিলাম, এটা আমাদের মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদন হয়ে এটা দরপত্র আহবান করা হয়েছে।