ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শাবি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গভীর রাতে উত্তাল ক্যাম্পাস

রাহাত হাসান মিশকাত, শাবি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৭ জানুয়ারী ২০২২ ১২:৫৭:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদসহ প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে রোববার রাত পোনে ১২ টায় শতশত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রাত ১২ টায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে গোলচত্বরে সমবেশ করে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাখান করেছেন শিক্ষার্থীরা। হল ও ক্যাম্পাস না ছাড়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ভিসিকে উদ্দেশ্য করে নানান স্লোগান দেয়া হয়। 'যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না। যেই ভিসি গুলি মারে, সেই ভিসি চাই না। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে,  ডাইরেক্ট একশন। পতন পতন পতন চাই, উপচার্যের পতন চাই।  ভিসির গদিতে,
আগুন জ্বালাও একসাথে।' এসব স্লোগানে গভীর রাতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস।

শাবি অনির্দিষ্টকালের বন্ধ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১২ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হয়ে বাসভবনে ফিরে জরুরি মিটিং করেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ।

এর আগে শিক্ষার্থীদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে অবরুদ্ধ ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদকে উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যারাত সোয়া ৬টার দিকে আইআইসিটি ভবন থেকে ভিসিকে উদ্ধার করে বাসভবনে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

ভিসিকে উদ্ধারের সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরের ডেপুটি কমিশনার আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর উত্তেজিত হয়। এরপরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

রোববার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে এ্যাকশনে নামে পুলিশ। ক্যাম্পাস সূত্র জানায় সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত শাবি প্রশাসনের সাথে আান্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনা শুরু হয়। সন্ধ্যা নেমে আসার পরপরই আলোচনারত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা শুরু করে পুলিশ। লাঠিচার্জসহ ব্যাপক টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলিশ বর্ষণ করা হয়। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থীসহ চার পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশ ২৭ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ২১ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।  

পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক - অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তানহা তাহসীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মিত্রা সংঘ, সজল কুন্ডু, বিভাগের নাম পাওয়া যায়নি এমন শিক্ষার্থী হলেন, মেহজাবিন পর্ণা, সজল কুণ্ডু, মাজেদুল ইসলাম সিজন, তাকিয়া ইসলাম, জুনায়েদ, সাজ্জাদ হোসেন, মসিউর ইসলাম, ইরফান, রায়হান আহমেদ, মুনির হোসেন তালুকদার, সেলিম এবং তমাল, সিফাত আকাশ, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব, হুমায়ূন কবির। এছাড়া অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের নাম জানা যায়নি।

রোববার বিকাল চারটায় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করে। এর পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে শুরু করে। ভিসিকে ধাওয়ার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ ডাকা হয় বলে ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে বিকেল তিনটায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ধাওয়া করে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে উপাচার্য নিজ কার্যালয় থেকে বাসভবনে যাবার পথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।

তাঁকে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। পরে সেই ভবনের কলাপসিবল গেইট আটকে দিয়ে উপাচার্যকে ভিতরে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিসহ তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

শনিবার রাত সাড়ে বারোটায় তাদের এ সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে ঘুরে দ্বিতীয় ছাত্রী হলের সামনে এসে শেষ

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরের উপস্থিতিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। রোববার সকাল আটটা থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কার্যক্রম শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, "কিছু দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রশাসনের রূঢ় আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত"।


ভিসির সংবাদ সম্মেলন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা যা করেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার বাস ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "পুলিশ হয়তো সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে তখন সবাই ছুটাছুটি করছিল। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পুলিশের অনেকেই আহত হয়েছে।

হঠাৎ করে এত সুন্দর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইট পাটকেল ও গুলি করবে এটা বিশ্বাস করা যায় না।

আমরা সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি কিন্তু এত ছোট বিষয় নিয়ে তারা এমন করবে তা কাম্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় ভিসিসহ শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করবে এটা মানা যায়।

তিনি আরও জানান, রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনিদির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টার শিক্ষার্থীদের হল খালি করার জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আমরা আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবো। শুধুমাত্র ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে কিন্তু অফিসিয়াল কার্যক্রম চলবে"।