জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত বাস সুবিধা না দিয়ে প্রতিনিয়ত স্টাফ বাসে বহিরাগত যাত্রী পরিবহন করে অর্থ আদায় করছেন স্টাফ বাসের কর্মচারীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের অপর্যাপ্ততার কথা বলে পর্যাপ্ত বাস দিচ্ছে না প্রশাসন। কিন্তু স্টাফ বাসগুলো প্রতিদিনই প্রায় অর্ধ-খালি গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। অনেক অনুরোধ করলেও সেসব বাসে শিক্ষার্থীদের উঠতে দেয়া হয় না। উপরন্তু বাসের কর্মচারীরা সাভার এবং ক্যাম্পাসের আশেপাশের বহিরাগত যাত্রী পরিবহন করে ভাড়া আদায় করতে ব্যস্ত। এছাড়াও উত্তরা-মিরপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোতে বাস কমিয়ে দেয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একবার ক্যাম্পাস বাসে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। তখন শিক্ষার্থী পরিচয় দেবার পরও আমার কাছে থেকে ভাড়া আদায় করা হয় এবং আমায় কোনো টিকিটও দেয়া হয় নি। তারা সে সময় খ্যাপে যাত্রী পরিবহন করছিল। এছাড়া অন্য যে কোনো সময় ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে ফিরতে গেলে সবসময়ই স্টাফ বাসের স্টাফরা আমাদের বাঁধা দেয় বাসে উঠতে। স্টুডেন্ট বাসে জায়গা না থাকা সত্ত্বেও তারা শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে কষ্ট করে ওই বাসে যেতে। কিন্তু স্টাফ বাসে দেখা যায় দুই তিন বা দশ জনের মতো মানুষ যাচ্ছে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন বলেন, কুরবানির ইদের ছুটিতে বাসার যাওয়ার জন্য বিকালের বাসে আমার ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আমি বাস ধরার উদ্দেশ্যে পরিবহন চত্ত্বরে গেলে জানতে পারি কোনো আগাম নির্দেশনা না দিয়েই শিক্ষার্থী বাস বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসময় একটি স্টাফ বাস মেডিকেলের সামনে থেকে আসে। বাসটিতে উঠতে চাইলে বাসের স্টাফ আমার সামনেই বাসের দরজা বন্ধ করে দেয় স্টাফ। কিন্তু পরক্ষণেই অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তিনি উঠতে দেন। এ বিষয়ে আমি পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে বিষয়টি অবগত করলেও তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী লায়লাতুল কাবা বলেন, আমাদের উত্তরা রুটে হুট করেই একটি বাস কমিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এতে করে আমাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ও রবিবারে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। গত রবিবারে আমরা যখন সকালের বাসে ক্যাম্পাসে আসছিলাম শিক্ষার্থীদের চাপ এত বেশিই ছিল যে একজনের পা অন্য জনের উপর উঠে যাচ্ছিল। অসহ্য গরমে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুই তিনজন আপু বাসের মধ্যেই বমি করে দেয়। আমাদের দাবি প্রতিদিন না হোক অন্তত রবিবার ও বৃহস্পতিবার আমাদের যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করলে অন্তত আমরা সুন্দর করে যাতায়াত করতে পারব।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবহন শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো আওলাদ হোসেন বলেন, 'এর আগেও কিছু বাসচালকের বিরুদ্ধে বহিরাগত যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ পেয়েছিলাম। আমি তাদেরকে বহিরাগত যাত্রী পরিবহনে মানা করে দিয়েছি। এছাড়াও একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় তাকে আমি দীর্ঘদিন বাস চালাতে দেই নি। এছাড়াও আমাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বাসগুলোকে প্রধান প্রধান স্টপেজে দাঁড়াতে বলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের উঠতে তাদের সাহায্য করতে নির্দেশ দেয়া আছে। শিক্ষার্থীদের পরিবহন বাসগুলোর প্রাথমিক লক্ষ্য। কেউ এর ব্যতিক্রম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাস সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘বিআরটিসি এর ভাড়া বাসগুলোর বেশ কিছু ভাড়া বকেয়া ছিল এবং ভাড়া বহন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কঠিন হচ্ছিল। সে কারণেই আমরা কিছু রুটে বাস কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। নতুন প্রশাসন আসলে আমরা কিছু বাস কিনব তখন আশা করি এই সংকট কিছুটা কমে আসবে। কিছু বাস ত্রাণ কাজে বাইরে থাকায় অতিরিক্ত বাসও ছিল না। আগামীতে ক্যাম্পাসে ব্যাক আপ বাস রাখা হবে।’