সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী।
সোমবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা সকলেই ইতোমধ্যে অবগত আছি যে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের (মেয়েদের হল) শিক্ষার্থীরা হলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রভোস্টের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে গেলে তিনি উদ্ধত ও অশোভন আচরণ করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। প্রভোস্টের উন্নাসিক মন্তব্য ও আচরণে ক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা হলের অব্যবস্থাপনা নিরসন, প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কায়দায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ হামলা করে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে আনা হয়। প্রশাসনের নির্দেশে নৃশংস কায়দায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামলায় কতজন আহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস মারফত জানা যাচ্ছে যে, এখনো পুলিশ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার জন্য খুঁজছে।
আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এক প্রকার স্তম্ভিত হয়ে লক্ষ্য করেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর শুধু হামলাই করেনি, তাদের ওপর জঘন্য কায়দায় শিক্ষক ও পুলিশের দিকে গুলি চালানোর মিথ্যা অপবাদও দিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করার পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আবার তাদেরকেই অভিযুক্ত করার মাধ্যমে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত করে বর্তমান ভিসি, প্রক্টরসহ এই প্রশাসন এক ভয়াবহ অন্ধকার অধ্যায় রচনা করেছে। একটা প্রশাসন কতটা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীবিরোধী হতে পারে, তার এক কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করল বর্তমান প্রশাসন। এই হামলার দায় একান্তই বর্তমান ভিসি, প্রক্টরসহ সমগ্র প্রশাসনের।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা মনে করি, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলা দূরে থাক, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে কোনোভাবে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশই করতে পারে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ধারণার বিরোধী। একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে মুক্তাঙ্গন। যেখানে মত ও পথের স্বাধীন চলাচল থাকবে। দাবি দাওয়া উত্থাপন, সেই দাবি দাওয়া না মানলে আন্দোলনের মাধ্যমে মানতে বাধ্য করা এসবই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আন্দোলন করা, নিজেদের মতকে তুলে ধরা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। পক্ষান্তরে যে কোনো ধরনের আন্দোলনে ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন এবং পরিশেষে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়ার মতো ন্যক্কারজনক কাজ প্রমাণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয় আদতে একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে জ্ঞানের তীর্থভূমি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার কবর রচিত হয়ে ইট-পাথরের এক কঙ্কাল অবশিষ্ট আছে মাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হওয়া, চলমান শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ নিম্নোক্ত দাবি জানাচ্ছি:
১. অবিলম্বে শিক্ষার্থী পীড়নকারী ভিসি, প্রক্টর ও ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে।
২. অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তদন্ত করতে হবে এবং আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও মানসিক আঘাত নিরাময়ের উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াসমূহ পূর্ণ-দায়িত্ব সহকারে আমলে নিতে হবে এবং মানতে হবে।
৫. যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিসর ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।