শেরপুর জেলা সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতানপুর এবং ওই গ্রাম লাগোয়া পাশ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার কারারপাড় গ্রাম দুটিতে অবৈধ ভাবে অটো ব্রিক ফিল্ডের ধোঁয়া ও সৃষ্ট গ্যাসে প্রায় ৮০ একর বোরো ধানের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বোরো মৌসুমের ফসল কৃষকরা তাদের ঘরে তুলতে পারবে না বিধায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে উল্লেখিত গ্রামের ১২০ জন কৃষকের স্বপ্ন পুঁড়ে গেছে।
১৭ এপ্রিল রোববার সকালে ওই দুটি গ্রামে সরেজমিনে দেখে গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার সুলতানপুর ও কারারপাড়া গ্রামে কৃষদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সহায় সম্বল খরচ করে রাত-দিন পরিশ্রম করে বোরো আবাদ করে ফসল ঘরে তোলার সপ্ন দেখছিলো ঠিক এ সময়ই বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়েছে তাদের মাথায়। পাশ্ববর্তী অবৈধ ইটভাটার ধোয়া, গরম বাতাস ও গ্যাসের কারণে আশাপাশের ফসলি ধানের জমি পুড়ে গেছে। বিস্তীর্ণ সবুজ ধান ক্ষেত এখন মড়া ক্ষেতে পরিনত হয়েছে। গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে, ধানগুলো হয়েছে চিটা। এছাড়া আশাপাশের বাঁশঝাড়, কাঠের বাগানসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ বিবর্ণ হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। তারা এখন হা-হুতাস করছেন আর কান্নাকাটি করছে এর ক্ষতিপুরণের জন্য।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে মনসুর, কালাম, আক্কাস, আমজাদ, ওয়াহাব, হাবি, শাহজাহান, কবির, রেহানা, মান্নান ও সোহাগসহ শতাধিক কৃষক জানান, বিগত ছয় বছর যাবৎ প্রভাবশালী একটি শিল্পপতি গ্রুপ অব কোম্পানী এ ভাটাটি গড়ে তুলে। যে ভাটার নেই কোন লাইসেন্স, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের নাকের ডগায় চলছে অবৈধ ভাবে ইট পোড়ানো। কোন নিয়ম-নীতি না মেনেই ইট পোঁড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে ওই অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পরও কিছুই হয়নি।
তারা অবৈধভাবে ইট ভাটা কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তা তাদের বোধগম্য নয় বলে জানায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররম। তিনি জানায়, ভাটার মালিক প্রভাবশালী এই শিল্পপতির কাছে এলাবাসী জিম্মি হয়ে জীবন কাটাচ্ছে, তবে এবারের ধানের ক্ষতি এলাকার কৃষকদের পথে বসিয়েছে।
সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়ন ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মো. লুৎফর রহমান ফসলের মাঠ পরিদর্শন শেষে অবৈধ ভাটার ধোয়াঁয় সৃষ্ট গ্যাসে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে সত্যতা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে ইট ভাটার ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন তাদের ইট ভাটা বৈধ বলে দাবী করে জানায়, ভাটার আগুনের কারণে ক্ষেতের এমনটা হয়েছে এটা কাল্পনিক। নিয়ম মেনেই আগুন সাট ডাউন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত ইট ভাটার আগুন মিস্ত্রী ঘটনার বর্ণনায় বলেন, আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় নেওয়া হলেও জিহান জিগ জ্যাগ ইট ভাটাই একদিনেই নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়েছে। আর বাতাস না থাকায় বিষাক্ত গ্যাস সরাসরি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের শেরপুর জেলা সহকারী পরিচালক আল মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, জিহান জিগ জ্যাগ ইট ভাটাটি একটি অবৈধ ইটের ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্রও নেই। এর আগেও এই ইটের ভাটার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছে। শেরপুর প্রশাসক এর সাথে পরামর্শক্রমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানায়, সরেজমিনে দেখা গেছে আশপাশের ইটভাপার আশপাশে বেশ কিছু জমির ধান চিটা হয়েছে। কিন্তু কেন হয়েছে তা গবেষকরা বলতে পারবে। তবে আপাতত কৃষকদের পরামশ্য দিয়েছি তারা যেন জমিতে সেচ দিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করে। তাতে ফসলের উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।