ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার(SAD): প্রকৃতির সাথে মনের কেমিস্ট্রি

এইচ এম তৌফিকুর রহমান : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০০:০০ অপরাহ্ন | মতামত
মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষের সাথে প্রকৃতির একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই প্রকৃতির ছন্দপতনের সাথে মানব মনেরও ছন্দপতন ঘটে।ব্যক্তিগত জীবনে লক্ষ্য করলে দেখবেন একটি আলো ঝলমলে দিনে মনটা  থাকে কর্মস্পৃহায় ভরপুর। ঠিক এর বিপরীতে একটি মেঘলা দিনে অথবা শীতের দিনে থাকেনা কোন কর্মস্পৃহা।মনে হয় যেন বিছানা আমাদেরকে , নয়ত আমরা বিছানাকে জড়িয়ে ধরেছি।পরিবর্তন হয় খাবার-দাবার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজকর্মে। বড় ধরনের তারতম্য হয় আমাদের বায়োক্লকে।
 
ঠিক তেমনি একটি বিষয় সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার(SAD)। এটিকে ভিন্ন নামে সিজনাল ডিপ্রেশন বা মৌসুমি বিষন্নতাও বলা হয়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে এর সম্পর্ক। গ্রীষ্মে এটি সামান্য পরিমাণে  ঘটলেও শীতেই এটি প্রকট আকার ধারণ করে। 
 
লক্ষণ এবং উপসর্গঃ
১.কর্মস্পৃহা কমে যাচ্ছে আগের চেয়ে। 
২.প্রচন্ড আলস্য সঙ্গী হয়েছে। 
৩.বিষন্নতা ঘিরে রাখছে দিনের বেশীরভাগ সময়।
৪.মৃত্যু চিন্তা বেড়ে গেছে, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও উঁকি দিচ্ছে মনে।
৫.এক সময়ের প্রিয় কাজগুলো কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। 
৬.হতাশা, অপরাধবোধ কাজ করছে ইদানীং অনেক বেশী। 
এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।যেগুলোর বেশীরভাগ বিষন্নতার সাথে সম্পর্কিত।
 
কেন হয় সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (SAD):
 
এসএডির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মস্তিষ্কের  বায়োকেমিক্যাল পদার্থের ভারসাম্যহীন অবস্থা। শীতের দিন খুব ছোট এবং স্বল্প সূর্যালোকের দিন হয়ে থাকে। যার ফলে খুব কম সূর্যালোক পেয়ে থাকি আমরা।আর এই সূর্যালোক ভূমিকা রাখে সেরোটোনিন নামক মনোঅ্যামিন নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে।যা আমাদের মেজাজের তারতম্য ঘটায়।
 
এর সাথে বিভিন্নরকম চাপ, রিলেশনশিপ ব্রেকআপ,কোন ট্রমাটিক ইভেন্ট এগুলো অনুঘটকের কাজ করে।
 
কখন চিকিৎসা প্রয়োজনঃ
সাধারণত শীতের প্রকোপ চলে যাওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আপনা থেকেই চলে যায়।সাধারণ মন খারাপ কিংবা অলসতা নরমাল জীবনেরই অনুষঙ্গ।কিন্তু যদি এমন হয় যে,কোন ভাবেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারছেন না,আপনার এমন মন মরা আচরণ আপনার ও আপনার পাশের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে,এমনকি মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার চিন্তাটিও উঁকি দিচ্ছে   তাহলে আপনার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।নাহলে সামান্য বিষয় হলেও এর কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
উন্নত বিশ্বে এই সমস্যা দূর করতে লাইট থেরাপি ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপিও প্রয়োগ করা হয়।
 
পরিশেষে বলব,এই শীতে 'ভয় নয়,সচেতনতাই রুখে দিতে পারে এসএডিকে'।তাই আসুন আমরা সচেতনতা অবলম্বন করি এবং মন ও দেহকে সুস্থ রাখি। 
 
লেখকঃ
এইচ এম তৌফিকুর রহমান 
শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।