সিলেট আওয়ামী রাজনীতি ও সংস্কৃতি জগতের প্রিয়মুখ প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। সংস্কৃতি জগতেও রয়েছে একাধিক পদ। সামাজিক কর্মকান্ডে বিচরণ শৈশব থেকে। ১৯৮৭ সালে স্কুল জবানায় ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে রাজনীতি করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ডে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে এখন তিনি সিলেট নগর পিতা হতে চান।
প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নানান ঘাত প্রতিঘাত আর জেল জুলুমের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করে আসছেন। এবার তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় আসতে চান দলীয় প্রতীক নিয়ে। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনের মাঠে নামবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীর রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক কর্মকান্ডের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৮৭ সালে স্কুলে অধ্যায়নকালীন যোগ দেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সে সময় এরশাদের শাসন চলছিল দেশে। এই দুর্যোগের মধ্যেও ছাত্রলীগের বৃহত্তর আম্বরখানা আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদকে দায়িত্ব লাভ করেন। এই দায়িত্ব প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীর জন্যে ডেকে আনে বিপদ। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মিছিল মিটিংয়ে সামনের সাড়িতে পাওয়া যেত প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীকে। জান্তা সরকারের নজর কাড়েন তিনি। যার খেসারত দিতে হয়েছে কারাবন্দি হয়ে। ১৯৮৮ সালে জান্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাকে যেতে হয় কারাগারে।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে তিনি সিলেট ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯২ সালে সিলেট সদর থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব চালিয়ে যান। একই সময়ে সিলেট জেলা যুবলীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৩ সালে সিলেট মহানগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। স্কুল জবানায় এরশাদ সরকারের আমলে তিনি প্রথম কারাবন্দি হন। ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আবার তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে জরুরি সরকারের সময় তিনি আবারও কারাবন্দি হন। ৫ মাস কারাভোগ করে মুক্তি পান।
সিলেটের সংস্কৃতি জগতে বিশাল দাপট রয়েছে প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীর। তিনি একজন গীতিকার, সুরকার হিসেবে সিলেটের সংস্কৃতি জগতে ব্যাপক পরিচিত। এজন্য তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখন তিনি জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট এর সাবেক সহ সভাপতি। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী তিনি। থিয়েটার ৭১ সিলেট এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সিলেট বিভাগের সহ সভাপতি। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া গীতিকবি ফাউন্ডেশন সিলেট এর সভাপতি এবং তানপুরা শিল্পী গোষ্ঠি সিলেট এর সভাপতি।
শৈশব থেকে নানান সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত আছেন প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। সামাজিক কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও জড়িত আছেন। শিল্পকলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সিলেট, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্টের আজীবন সদস্য।
করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী অসহায় মানুষের পাশে ছুটে গেছেন। বিশেষ করে সংস্কৃতি কর্মীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন নানান সহযোগিতা নিয়ে। স্বাস্থ্যবিধির কারণে একাকী ছুটে গেছেন কর্মহীন মানুষের দুয়ারে। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে তাঁকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছে। তিনি নিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। কিন্তু করোনার ছোবল থেকে রক্ষা করতে পারেননি স্ত্রীকে। প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী আফসানা জামান চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ১ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন।
এবারের ভয়াবহ বন্যায় প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী সিলেট মহানগরসহ আশপাশ এলাকার বন্যার্ত মানুষের পাশে ছুটে গেছেন। বন্যাকবলিত মানুষজনকে উদ্ধার করেছেন। তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা। ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিকভাবে তিনি ওই কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন।
প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজকে আত্মনিয়োগ করতে চান জনসেবায়।