ঢাকা, শনিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ ১৪৩১

সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের ১৫টিতেই নৌকার জয়

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৮ জানুয়ারী ২০২৪ ০৪:৫৪:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে ১৫টিতেই জিতেছেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা। অন্য ৪টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে আবার ৩ জনই আওয়ামী লীগ অনুসারী। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তারা।

সিলেট জেলা: সিলেটে কয়েকজন প্রার্থীর বর্জনের মধ্যেও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। আর বাকি একটিতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলতলী পীরের ছেলে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী।

সিলেট-১ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা ফয়জুল হক মিনার প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৩ ভোট।

সিলেট-২ আসনে ৮৮ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান মুহিব ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫৩৬ ভোট। এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহিয়া চৌধুরী পেয়েছেন ৬৮৩৭ ভোট।

সিলেট-৩ আসনে ৮০ হাজার ৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ট্রাক প্রতীকে ৩৫ হাজার ৪০৫ ভোট  পেয়েছেন।

সিলেট-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ১১ ভোট। এছাড়া ওই আসনের ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন কামরান মিনার প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৫২ ভোট।

সিলেট-৫ আসনে ৪৪ হাজার ৭৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, ফুলতলী পীরের ছেলে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী। তার প্রতীক ছিল কেটলি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ৩২ হাজার ৫১ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবীর ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।

সিলেট-৬ আসনে ১৬ হাজার ৪৮৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে নৌকা প্রতীক। নৌকা প্রতীকে ৫০ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন ঈগল প্রতীকে ৩৩ হাজার ৬০৪ ভোট।

মৌলভীবাজার জেলা: মৌলভীবাজার-৪ টি আসনেই জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা- জুড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাবুদ্দিন আহমেদ (নৌকা) ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ ( লাঙ্গল) পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৮ ভোট।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (নৌকা) ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী একে এম শফি আহম্মদ সলমান (ট্রাক) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৫২ভোট। এ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন (সোনালী আশ) পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ভোট।  

মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিল্লুর রহমান (নৌকা) ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আলতাফুর রহমান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ২৬৯৮ ভোট।

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ (নৌকা) ২ লাখ ১২ হাজার ৪৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুল মুহিত হাসানি (মোমবাতি) পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯০ভোট।

হবিগঞ্জ জেলা: হবিগঞ্জের ৪ টি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অপর দুটিতে জিতেছেন আয়ামী লীগদলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী।

হবিগঞ্জ-১ আসনে জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরী (ঈগল)। এ আসনে মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুকিত চৌধুরী বাবুকে হারিয়েছেন তিনি। কেয়া চৌধুরী ঈগল প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু পেয়েছেন ৩০ হাজার ৬০৩ ভোট।

হবিগঞ্জ-২ আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুহেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানকে হারিয়েছেন তিনি।

ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল ৯৯ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মো. আব্দুল মজিদ খান পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৬০৬ ভোট।

হবিগঞ্জ-৩ আসনে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাহির। জাহির পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এমএ মুমিন চৌধুরী বুলবুল পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৬ ভোট।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে বড় ব্যবধানে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারতে হয়েছে তার কাছে। এ আসনে ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৭৭টি কেন্দ্রে ভোট দেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার সুমন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব আলী পেয়েছেন মাত্র ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট।

সুনামগঞ্জ জেলা: সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগ ও ১টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

প্রার্থীদের এজেন্ট ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ ১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী রঞ্জিত চন্দ্র সরকার ১ লাখ ৯৯৮ ভোব পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কেটলী প্রতীকে ৪৯ হাজার ৯৪১ ভোট ও ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ ৪৩ হাজার ৭১০ ভোট পেয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে কাঁচি প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী  বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তক। তিনি পেয়েছেন ৮০ হাজার ৩৩৯ ভোট। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নৌকা প্রতীকে ৫৪ হাজার ৯৪১ ভোট পেয়েছেন।


সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছে। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী  এডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ভোট।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক ৯০ হাজার ৫৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭২১ ভোট।
এদিকে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মহিবুর রহমান  মানিক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম চৌধুরীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার ভোটের হিসাব পাওয়া যায়নি।