ঢাকা, শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিলেটের তিনটি টোল প্লাজায় সীমাহিন লুটপাটের অভিযোগ

সিলেট ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২০ অগাস্ট ২০২৪ ০৭:৫০:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সেতুর টোল আদায় করার জন্যে নিয়োগ করা হয় ঠিকাদার। ঠিকাদার নিয়োগ করে সড়ক ও জনপথ। টেন্ডার অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টোল আদায় করে। সিলেটের শেরপুর সেতু, শাহপরাণ সেতু ও শেওলা সেতুর ক্ষেত্রে ওই একই নিয়ম চালু ছিল। কিন্তু এক বছর ধরে ওই তিনটি সেতুর জন্যে নিয়োগ করা হয়নি কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতু তিনটি থেকে নিজেরাই টোল আদায় শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। একই সঙ্গে সৃষ্টি করে লুটপাটের ক্ষেত্র। এভাবে গত এক বছরে এই তিনটি সেতু থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এই লুটপাটে অংশিদার ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবাভশালী তিন নেতা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছিল তীব্র অসন্তোষ। যার বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত ৫ আগস্ট। তিনটি টোল প্লাজায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় টোল আদায়। অবশ্য ১৬ আগস্ট থেকে আবার টোল আদায় শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। টোল আদায় করছে তারা নিজেরাই।    
স্থানীয়রা জানান, দুটি কারণে মানুষের ক্ষোভ ছিল। প্রথমত বিগত সময়ে এসব টোল প্লাজায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সেতুর টাকা আওয়ামী লীগ নেতা আর সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো টোল প্লাজার ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা আদায় অব্যাহত ছিল। এসব ক্ষোভ থেকেই টোল প্লাজায় হামলার ঘটনা ঘটে। এখন সাধারণ মানুষ সেতুগুলো টোলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুরে যেভাবে হামলা শুরু হয়েছিল এলাকার লোকজন সেদিন বিক্ষোভকারীদের না দমালে টোল প্লাজার কিছুই অবশিষ্ট থাকত না। একইভাবে ফেঞ্চুগঞ্জ টোল প্লাজায় গিয়ে দেখা যায় হামলার চিহ্ন। তছনছ করা হয়েছে টোল ঘরের ভেতর। লুট করা হয়েছে সেখানে থাকা টাকাও।
ওসমানী নগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আসকর ফয়েজ জানান, সেদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে কোনো রকমে দমানো হয়েছে। স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিলে বিক্ষোভকারীদের সামাল না দিলে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেত। শেরপুর সেতুর টোল অদায় নিয়ে নানা অনিয়ম হয়েছে।
সুত্র জানায় নানান অনিয়মের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। পরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ নিজেরাই টাকা তুলে নিত। একপর্যায়ে তারা নানান অনিয়মের জড়িয়ে পড়ে। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ওই তিনটি টোল প্লাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর সেতু টোল প্লাজা, শাহপরাণ বাইপাস সড়কের শাহপরাণ (রহ.) সেতু ও সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের ফেঞ্চুগঞ্জ টোল প্লাজা থেকে টোল আদায় করছে সওজ। তিনটি টোল প্লাজায় কম্পিউটারের সফটওয়্যার জটিলতার কারণে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্থাৎ রসিদ দিয়ে টোল আদায় চলছে। প্রত্যেক টোল প্লাজা থেকে অনেক সময় রসিদ ছাড়াই টোল আদায় হয়; বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশাসহ ছোট আকারের যান থেকে। প্রতিদিন বা একদিন পরপর টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এক সপ্তাহ কিংবা ১০-১৫ দিন পরপর টাকা জমা হয়। সরকারি কোষাগারে খাস কালেকশনের পুরো টাকা জমা না দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। নানান কৌশলে তিনটি প্লাজা থেকে মাসে প্রায় কোটি টাকা লোপাট করা হয়। এতে এখনো ভাগ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার। বড় অংশ নিচ্ছেন সওজের প্রধান প্রকৌশলীসহ কয়েকজন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শেরপুর সেতু থেকে ৪-৫ লাখ টাকা, ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা ও শাহপরাণ সেতু থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় হয়। কিন্তু সরকারি কোষাগারের জমা দেওয়া হচ্ছে অনেক কম।
সওজ, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সিলেটের বিভিন্ন সেতুর টোল প্লাজায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এ কারণে টোল আদায় বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, শুক্রবার ১৬ আগস্ট সকাল থেকে শাহপরান সেতু ও শেরপুর সেতু থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেসব সেতুর টোল আদায় নিয়ে আপত্তি আছে, সে বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে হবে। সরকার যদি চায় আর রাজস্ব আদায় করবে না, তাহলে করা হবে না। বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।