ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দোয়ারায় সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৮ জুন ২০২৩ ০৩:৩৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

গত কয়দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। রোববার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত উজানের পাহাড়ি সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দোয়ারাবাজারে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরের মাঝামাঝি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের কৈয়ারকান্দা ১০০ মিটার নামক স্থানে সড়ক পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি বেড়ে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সবকটি নদীর পানি প্রবল বেগে নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সবকটি হাওর পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে কয়েকটি উপজেলায় সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শহরে আসতে গিয়ে কোনো কোনো সড়কে মানুষজন নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার হাওর পাড়ে ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লক্ষাধিক মানুষ গত বছরের বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন।

জরুরি প্রয়োজন তাহিরপুর উপজেলা থেকে জেলা শহরে সকালে বের হন জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, জেলার সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলাসহ কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও জেলার হাওর পাড়ের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে কষ্ট করে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছাতে হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, বন্যার আশঙ্কায় সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমার ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না উপজেলার জালালপুর গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, অসংখ্য বসত বাড়িসহ খোদ বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটে।

সুরমানদীর ভাঙন ভয়াবহতায় মান্নারগাঁও  সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। জেলা প্রশাসক জালালপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটা রক্ষায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের।

সংশ্লিষ্টরা মসজিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটা রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়ে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করেন। নিযুক্ত ঠিকাদার ভাঙন কবলিত স্থানে বালুভর্তি বস্তা যত্রতত্র ফেলে রাখেন।

সরজমিনে জালালপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতবাড়ি, জামে মসজিদ, অটো রাইস মিল চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে।

ঝুলন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আমার বাড়ির ছবি এবং একটি দরখাস্ত নিয়া গেলে তিনি তাৎক্ষণিক নির্দেশনার পর পাউবো কর্তৃপক্ষ ও নিযুক্ত ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনায় এখন আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না আমার বাড়িঘর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে বার বার গেলেও কোন কর্ণপাত করেনি তারা। অন্তত ২০ দিন পূর্বে বস্তা ভর্তি বালু ফেলা হলে আমার বসত ভিটের ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হতো।

একইভাবে তীব্র ভাঙনের কবলে রয়েছে জালালপুর গ্রামের অটো রাইস মিলটিও। অটো রাইস মিল মালিক রাজা মিয়া রাসু বলেন, সুরমার ভাঙন থেকে আর রক্ষা হলো না আমাদের। নদীর তীরে বস্তাবন্দি বালি পানির স্রোত ভেসে যাচ্ছে, কিন্তু এই বস্তা ফেলা হয়নি ভাঙন রোধে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বে বালুর বস্তা ফেলা হলে ভাঙন রোধ কিছুটা সম্ভব হতো।

জালালপুর গ্রামবাসী বলছেন, ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার গাফিলতিতে ভাঙন ঠেকানো গেলো না। শুরুতেই বালির বস্তা ফেলা হলে ভাঙন রোধ সম্ভব হতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিযুক্ত ঠিকাদার ফারুক মিয়া বলেন, কাজের নির্দেশনা পাওয়ার পরই শ্রমিকরা ভাঙন কবলিত এলাকায় বালির বস্তা ফেলা অব্যাহত রেখেছে। আজকেও ভত বালু ভর্তি বস্তা আনা করা হচ্ছে।

পাউবো সুনামগঞ্জের এসডিও সমশের আলী মন্টু বলেন, জালালপুর গ্রামের ভাঙন রোধে দ্রুত বালুর বস্তা ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।