ঢাকা: নির্বাচনে প্রথম দিনের হট্টগোল, হামলা, ভাংচুরের পর শেষদিনেও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সমিতির নির্বাচনে শেষ দিনের নির্বাচনের ভোট শুরু হয় সকাল ১০টার পর। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা জড়ো হয়ে পাল্টাপাল্টি শ্লোগান দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে দুপক্ষে তুমুল উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। যদিও বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে সমিতির শেষ দিনের ভোট গ্রহণ চলে।
এর আগে গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এদিন সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই পক্ষের হট্টগোলের ঘটনায় ভোট শুরু হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেননি।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ভোট হবে দুদিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার)। দুদিনই সকাল ১০টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের কথা। নির্বাচনের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
বুধবার সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল। এ সময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।
ঘটনার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। তাদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আহামেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ দিতে বললে তারা সেটি দেন। তারপর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোট গ্রহণের মধ্যে গতকাল বিকেল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকেল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ।
হাতাহাতি-মারামারি ও ভোটবন্ধের ঘটনায় বিএনপিপন্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। বিষয়টিতে পাত্তা না দিয়ে বিএনপিপন্থীরা দাবি করেছেন, সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোট গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন চলবে।