ঢাকা, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে নির্যাতন, সম্পর্ক অস্বীকার ও আদালত অবমাননার অভিযোগ

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারী ২০২২ ০৪:১৯:০০ অপরাহ্ন | গণমাধ্যম
যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে নির্যাতন, সম্পর্ক অস্বীকার করে একাকী ফেলে রেখে যাওয়া,  আদালত অবমাননাসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বুধবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় সৈয়দপুর প্লাজার রেড চিলি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী নারী। 
 
সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার সানজিদা চৌধুরী সুরভী নামের ওই নারী জানান, সৈয়দপুরের বাসিন্দা হলেও তারা পারিবারিকভাবে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় ১৩ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানেন প্রথম স্বামী। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হই।
 
তাছাড়া আমি আগে থেকেই থ্যালাসেমিয়ার রোগী। ২ বছর আগে সৈয়দপুরে বেড়াতে এসে অসুস্থ হলে ডক্টরস ক্লিনিকে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসক ডা. মান্না চক্রবর্তীর কাছে চিকিৎসা নেই। তিনি সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার ডা. ষষ্ঠী চরণ চক্রবর্তী ও মালারানী চক্রবর্তীর ছেলে এবং এক সন্তানের জনক। 
 
ঢাকায় গিয়েও মোবাইলে তার পরামর্শক্রমে ওষুধ খাওয়া অব্যাহত রাখি। এই সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয়। এক পর্যায়ে আমার সম্পর্কে বিশদ জেনে মান্না প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি হিন্দু হওয়ায় সাড়া না দিলে তিনি নিজে থেকেই নীলফামারী নোটারী পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। মো. মান্না মুন নাম ধারণ করে তিনি আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। বিয়ে না করলে আমার নামে ভার্চুয়াল অপপ্রচার করবে বলেও হুমকি দেয়। 
 
এমতাবস্থায় গত ২০২১ সালের ৩১ আগষ্ট ঢাকায় কোতোয়ালী থানাধীন জনসন রোডস্থ কাজী অফিসে ইসলামি শরীয়া আইনে আমাকে নিকাহ করে ডা. মান্না মুন। পরে ঢাকায় নোটারী পাবলিকে বিয়ে সংক্রান্ত যৌথ এফিডেভিটও করা হয়। এরপর প্রায় এক মাস ঢাকায় একসাথে বসবাস করি আমরা। গত অক্টোবর মাসে শ্বাশুড়ী মালারানী আমাদের সৈয়দপুরে নিয়ে আসেন। 
 
এখানে থাকাবস্থায় তারা আমার উপর চরম অত্যাচার শুরু করে। আমাকে ও আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠিকমত খাবারও দেয়নি। এমনকি স্বামী মান্না কে শ্বাশুড়ী মাদক সরবরাহ করে নেশাগ্রস্ত করার মাধ্যমে আমার উপর অত্যাচারে প্ররোচিত করে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে কারণ জানতে চাইলে তারা ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন। তাদের কথায় সম্মত না হলে সংসার করতে দিবেন না বলে হুমকি দেন মালারানী। এমনকি সৈয়দপুরেও থাকতে দেয়া হবেনা। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় এক মাস পর ব্যাপক অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। 
 
বাধ্য হয়ে সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতে থাকি। এরই মাঝে গত ১ জানুয়ারি আবারও মান্না মাদকাসক্ত হয়ে অত্যাচার শুরু করলে তার সাথে ঝগড়া হয়। এতে সে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে কোনভাবেই তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। মোবাইল, ফেসবুক থেকে আমাকে ব্লক করে রাখে। পরে জানতে পারি মান্না তার মায়ের বাড়ীতে ৬ মাস পূর্বে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেয়া তার প্রথম স্ত্রীর সাথে বসবাস করছে। 
 
এই পরিস্থিতিতে আমি হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে সমাধানের জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। এই ঘুরার প্রাক্কালেই গত ৮ জানুয়ারি সন্ধা ৬ টায় সৈয়দপুর প্লাজার সামনে রাস্তায় মান্না ও মালারানীর দেখা পেয়ে আমার ন্যায্য অধিকার দেয়ার দাবী জানালে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা সহ এই বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মারপিট করাসহ দিগম্বর করে সৈয়দপুর থেকে তাড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেন। এমনকি আইন আদালত করলে প্রানে মেরে ফেলে লাশ গুম করবে। মালারানী নিজেকে সৈয়দপুরের গডমাদার আখ্যায়িত করে সাবধান হওয়ার জন্য হুশিয়ার করেন। এ ব্যাপারে পরদিন সৈয়দপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। জিডি নং ৫২৮। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা নানাভাবে হয়রানী করে চলেছে। 
 
এফিডেভিট করে ধর্ম ত্যাগ, বিয়ে করেও এখন তা অস্বীকার করার মাধ্যমে আদালত, ধর্ম, সমাজকে অবজ্ঞা করে তারা অন্যায় করছে। যৌতুকের লোভে  তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আমি এখন দূর্বিসহ অন্ধকারে নিপতিত হয়েছি। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে আমাদের মা-ছেলের জীবন নষ্ট করার জন্য আমি তাদের বিচার চাই। এজন্য প্রশাসনের কাছে আইনী সহযোগীতা ও সংবাদকর্মীদের কাছে পত্রিকা ও মিডিয়ায় মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য সহায়তা প্রত্যাশা করছি।