ঈদ করতে স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। দুই বছরের করোনাকাল শেষে এবারের ঈদুল ফিতরে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এ ছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করবে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঈদের সময় বাড়ি গিয়েছিল।
ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় গড়ে প্রতিদিন ১৬ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। মানুষ ঈদ উদ্যাপনে সড়ক, রেল ও নৌ পথের মতো আকাশপথেও যাচ্ছে। পথের ভোগান্তি কমাতে আকাশপথে ভরসা রাখছেন সামর্থ্যবানেরা। এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এবার ঈদ সামনে রেখে আকাশপথে রাজধানী ছাড়ছেন ৪০ হাজারের মতো মানুষ। মূলত ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এ চার দিনকে ধরা হচ্ছে ঈদযাত্রা। শুধু এ চার দিনেই আকাশপথে ঢাকা ছাড়ছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার।
ঈদযাত্রা কেন্দ্র করে প্রথম দফায় গার্মেন্টস ছুটি হলেও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তবে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঈদের আগে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের জন্য লেন বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেলের জন্য করা হয়েছে দুটি লেন। এর পরও সেতুর পুব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ঈদ ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে। গতকাল ভোর থেকে এ দুই ঘাটে বাড়িফেরা মানুষ আসতে শুরু করেন; বেলা বাড়লে লোকজনের ভিড়ও বাড়তে থাকে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেশি পড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। আর ফেরিতে চাপ থাকায় ঘাট এলাকায় বড় হয়েছে গাড়ির লাইন। যাত্রীদের মধ্যে বাড়ি ফেরার আনন্দের রেশ থাকলেও প্রচণ্ডগরমে কাঁধে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার ধকলের স্পষ্ট ছাপও ছিল তাদের চোখে-মুখে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীর ঢল নেমেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জড়ো হচ্ছেন লোকজন। সবার একটাই আশা- প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করা। ঘাটে একটু দেরি হলেও দূরপাল্লার যাত্রীরা স্বচ্ছন্দেই ফেরিতে উঠে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। গতকাল শেষ বিকালে রাজধানীর সদরঘাটে বাড়ে যাত্রীর চাপ। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন লঞ্চমালিকরা। সদরঘাটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রীর চাপ না থাকলেও শেষ বিকালে ঘাটে ভিড় করেন যাত্রীরা। সদরঘাটে পৌঁছাতে বিকাল থেকে যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
পাটুরিয়ায় যাত্রীর ঢল : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীর ঢল নেমেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জড়ো হচ্ছেন লোকজন। সবার একটাই আশা- প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করা। ঘাটে একটু দেরি হলেও দূরপাল্লার যাত্রীরা স্বচ্ছন্দেই ফেরিতে উঠে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ বাসের যাত্রীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। এসব বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে ঘাটে যাওয়ার কোনো যানবাহন নেই। নেই কোনো ধরনের রিকশা-ভ্যান। বাধ্য হয়েই লোকজন হেঁটে লঞ্চ ও ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। এ নৌপথের যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নতুন বিয়ে করেছি। বউ নিয়ে এবারই প্রথম বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু এত দূর পায়ে হেঁটে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ঘাটে যাচ্ছি।’
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে মানুষের ভিড় : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। গতকাল সকাল থেকে মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে যানবাহন সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছেন না অনেকেই। রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার পথে অপেক্ষমাণ শত শত মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কোনো একটি গাড়ি দাঁড়ালেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। আবার অনেকেই দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। যাত্রীরা জানান, কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যের যানবাহন পাচ্ছেন না। আর পেলেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
এলেঙ্গায় অপেক্ষমাণ কালিহাতীর বল্লা গ্রামের তাঁত শ্রমিক সুকুর বলেন, ‘আমি পাবনা যাব। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্ত কাক্সিক্ষত পরিবহন পাচ্ছি না। যাও দু-একটি গাড়ি পাচ্ছি, তারা দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে।’
এ ব্যাপারে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ আতাউর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে মহাসড়কে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। মহাসড়কে যানজট বাড়ছে। তবে পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তত রয়েছে।
সাভারেও মহাসড়কেও ছিল যানজট : ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কসহ সাভার অংশের সড়কগুলোয় সকালে গাড়ির চাপ তেমন একটা না থাকলেও রাতে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কগুলোয় সকালে বেশ ফাঁকাই দেখা গেছে। আর দুই দিন পর ঈদ। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। কয়েক দিন ধরে ঈদে ঘরমুখো মানুষ যানজটে ভোগান্তি পোহালেও গতকাল সাভারের সড়ক-মহাসড়কে স্বস্তি ফিরেছে। প্রায় ফাঁকা সাভারের সব সড়ক-মহাসড়ক। গতকাল সকালের দিকে সাভারের টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড, ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সড়কে দীর্ঘ সময় পর পর চলছে কিছু ট্রাক, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার রাতভর সাভারের প্রতিটি মহাসড়কে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। কয়েক মিনিটের পথ পাড়ি দিতে বেশ সময় লেগেছে। কিন্তু গতকাল সকাল থেকেই এসব মহাসড়কে যাত্রীবাহীসহ পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ কমতে থাকে। সকালে মহাসড়ক ফাঁকা হতে শুরু করে। তবে রাতের দিকে কিছুটা যানজট লক্ষ্য করা গেছে। মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে যানজটের কারণে অনেককেই ভেঙে ভেঙে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
থেমে থেমে যানজট : বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। এতে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপের কারণে মহাসড়কে কখনো যানজট, কখনো ধীরগতিতে চলেছে গাড়ি। ফলে বিপাকে রয়েছেন চালক ও যাত্রীরা। গতকাল সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের মুলিবাড়ী, কড্ডা, কোনাবাড়ী, পাঁচলিয়া ও নলকা মোড় পর্যন্ত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহন চলেছে ধীরগতিতে। সিরাজগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপ ভ্যানের পেছনে ধাক্কা লেগে আমিনুল (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ছে : স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে গ্রামে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। ফলে গাড়ির চাপ ও ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে সড়ক-মহাসড়কে। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকাল থেকেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পায়। চন্দ্রায় যানবাহনের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। ঘরমুখো মানুষের তুলনায় যাত্রীবাহী বাসের স্বল্পতা ও ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণে অনেককেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপে চড়ে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে। তবে গাজীপুরের বিভিন্ন বাসস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ে ভিড়ও। যারা বাস পাচ্ছেন না তারা ভিন্ন উপায়ে যেমন ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি ও মোটরসাইকেল ভাড়া করে যাচ্ছেন।
কুমিল্লা অংশে স্বস্তির ঈদযাত্রা : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঘরমুখো মানুষের চলাচলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ গাড়ির চাপ বাড়লেও আজ নেই কোনো যানজট। এবারের ঈদে লম্বা ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা এসব মানুষের প্রত্যাশা ভোগান্তিহীন বাড়ি ফেরা। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ায় মহাসড়কের দাউদকান্দি, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, ক্যান্টনমেন্ট, পদুয়ার বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ধীরগতির সৃষ্টি হয়। তবে মহাসড়কের কুমিল্লার অংশের কোথাও যানজট দেখা যায়নি। বিভিন্ন মোড়ে হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকে কাজ করতে দেখা গেছে।
ঘাটে মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে : মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে সকাল থেকে শত শত মোটরসাইকেল পার হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে মোটরসাইকেলের চাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে একটি ঘাট শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, অনেকেই লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি পার হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে স্পিডবোট ঘাটে কিছুটা অনিয়ম দেখা গেছে। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অনেক বোট অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। লঞ্চেও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
টানা ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা : লম্বা ছুটি পেয়ে নাড়ির টানে যান্ত্রিক নগরী ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। ফলে যানজটের নগরী এখন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। ঢাকার চিরাচরিত সেই যানজট এখন দেখা যাচ্ছে না। যানজট না থাকায় মানুষ সহজেই ঢাকার মহানগরীর মধ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। এবার ৩০ রোজা পূর্ণ হলে ঈদ উদযাপন হবে ৩ মে। এ ক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরে দেশের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত টানা ছয় দিনের ছুটি পেয়েছেন। ঈদের ছুটি মূলত তিন দিন। তবে ঈদের আগে সাপ্তাহিক ছুটি ও মে দিবসের ছুটি মিলিয়ে এবার ঈদের ছুটি বেড়ে ছয় দিন হয়ে গেছে। ঈদের আগের শুক্রবার ছিল ২৯ এপ্রিল। পরদিন শনিবার ৩০ এপ্রিল। ১ মে রবিবার শ্রমিক দিবসের সরকারি ছুটি। একই সঙ্গে এদিন ঈদের ছুটিও শুরু হচ্ছে। এরপর সোম ও মঙ্গলবার ঈদের ছুটি। তবে রোজা যদি ৩০টি হয় সে ক্ষেত্রে বুধবারও (৪ মে) ঈদের সরকারি ছুটি থাকবে। ফলে টানা ছয় দিন ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এদিকে কেউ কেউ ৫ মে (বৃহস্পতিবার) বাড়তি ছুটি নিয়েছেন। এতে ৬ ও ৭ মে (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মোট নয় দিন ছুটি কাটাতে পারবেন। এমন লম্বা ছুটি মেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢল নামে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে। অবশ্য কেউ কেউ ঝামেলামুক্তভাবে গ্রামের বাড়ি যেতে আরও আগেই ঢাকা ছেড়েছেন। সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। এতে যানজটের নগরী ঢাকার চিত্র বদলে গেছে। গতকাল পল্টন গিয়ে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত অঞ্চলটি প্রায় ফাঁকা। মানুষের আনাগোনা যেমন কম, গাড়ির চাপও তেমনি কম। পল্টনে কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. সফিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অফিসের কাজে ধানমন্ডি থেকে পল্টনে এসেছি। রাস্তায় কোনো যানজট নেই। সহজেই চলে আসতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। আমি আগেই ঝিনাইদহের গ্রামের বাড়িতে পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ অফিসের কাজ শেষ করে আমি রাতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেব। ঢাকায় ফিরব ৭ এপ্রিল। অনেক দিন পর এমন লম্বা ছুটি পেলাম। রাজধানীর যানজটপূর্ণ এলাকা কাকরাইলও অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। কাকরাইল মোড়ে কথা হয় আকাশ পরিবহনের চালক মো. মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার এই রুটে যানজট তুলনামূলক কম থাকে। গত দুই দিনে প্রচুর মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ অনেক কম। যে কারণে যানজট নেই।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আধা ঘণ্টায় যতটুকু রাস্তা যাওয়া যায়, এখন সেই রাস্তা পার হতে পাঁচ মিনিটের বেশি লাগছে না। রাস্তা এমন থাকলে গাড়ি চালাতে ভালো লাগে। কিন্তু যানজটে আটকে থাকলে খুব বিরক্ত লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয় ঢাকা ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু পেটের দায়ে ঢাকায় পড়ে আছি। যানজটের চিত্র দেখা যায়নি মালিবাগ আবুল হোটেল, রামপুরা অঞ্চলেও।