ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর কারামত

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:০৭:০০ অপরাহ্ন | ধর্ম

হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর উরসের সময় ঘনিয়ে আসছে। উরসকে সামনে রেখে সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়ার মাজার প্রাঙ্গণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা ছুটে আসছেন। আশেকানরা গভীর রাত অবধি মাজার প্রাঙ্গণে মজমা বসিয়ে হযরত শাহপরাণ (রহ.) গুণগান গাইছেন। বিশেষ কওে হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর কারামতি আলোচনায় স্থান পাচ্ছে ব্যাপকভাবে।

এখানে দু’টি কারামত উল্লেখ করা হলো । হযরত শাহপরাণ (রহ: ) এর মাত্র পাঁচ কি ছয় বছর। ওই সময়ের একটি ঘটনা মশহুর আছে। একদা তিনি স্বীয় পিতার কাছে বসে পাক কালামে মজিদ তিলাওয়াত করছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে বলল, হুজুর আমার একটি দুর্ঘটনার খবর শুনুন। আমার একটি মাত্র ছেলে। কিন্তু তাকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে। তারপর তিন মাস অতীত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাহার খোঁজ খবর নেই। কোথাও তার সন্ধান পাচ্ছি না। দেখতেই পাচ্ছেন আমি বৃদ্ধ মানুষ। সুতরাং আমি আমার চোখের মণি পুত্রটিকে হারিয়ে চারিদিক একেবারে অন্ধকার দেখছি। আমার স্ত্রী কলিজার টুকরা পুত্রটিকে হারিয়ে দিবা নিশি কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক আপনি আমার ছেলেটির জন্য দোয়া করুন, সে যেন আমাদের কোলে ফিরে আসে। হযরত শাহপরাণ (রহ: ) এর পিতা কিছু বলবার পূর্বেই হযরত শাহপরাণ (রহ: ) বলে উঠলেন যাও তোমার কোনো চিন্তা নেই। নিশ্চিন্ত মনে তুমি গৃহে প্রত্যাবর্তন কর। তথায় গিয়ে তুমি তাকে খানাপিনা খাওয়ানোর ব্যবস্থা কর। মাগরিবের নামাযের পূর্বেই তোমার ছেলে ইনশাআল্লাহ বাড়ি ফিরে আসবে। আল্লাহ তা’ওয়ালার কাছে সবই সম্ভব। তাঁর কুদরত কে বুঝিতে পারে? বালক হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর এই কথা বলার ভঙ্গির মধ্যে এমন কিছু ছিল। যা তার বুজুর্গ পিতাকেও বিস্মিত করে তুলল। তিনি পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা শাহ পরান। তুমি এই ব্যাপারে এত নিশ্চিত হলে কী করে? হযরত শাহপরাণ (রহ: ) তাঁর পিতাকে পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত হযরত খিযির ( আ: ) ও হযরত মুসা (আ:) এর ঘটনা উল্লেখ করিয়া বললেন, পরম করুণাময় আল্লাহ তা’য়ালা যাকে ইচ্ছা করেন, তাকেই তাঁর অগাধ জ্ঞান ভান্ডার হতে জ্ঞান দান করিয়া থাকেন। উল্লেখিত লোকটিকে হযরত শাহপরাণ যা বলেছিলেন, তা সম্পূর্ণ সত্যে পরিণত হয়েছিল। ওই বৃদ্ধের সেই হারানো ছেলেটি মাগরিবের ওয়াক্তের পূর্বেই বাড়ি ফিরিয়া এসেছিল।

হযরত শাহজালাল (রহ:) সিলেট আসার পথে হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া ( রহ: ) ’র সম্মানিত মেহমান হিসেবে কয়েকদিন দিল্লীতে অবস্থান করেন। দিল্লী থেকে আসার সময় হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া তাঁকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সিলেটে আসার পর কবুতর দুটোর বংশ বৃদ্ধি পায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হবার পর আজও অনেক মানুষ হযরত শাহজালাল (রহ: ) ’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই জালালী কবুতরগুলো খায়না কিংবা বধ করে না। সাধারণ মানুষ এমন কি হযরত শাহজালালের সহচর কেউই যখন জালালী কবুতর বধ করতে সাহস পাচ্ছিলেন না, তখন হযরত শাহপরাণ ( রহ: ) প্রতিদিন একটি করে কবুতর জবাই করে খাওয়া শুরু করেন এবং কবুতরের পালকগুলো তিনি সযতেœ রেখে দিতেন। এমনিভাবে প্রতিদিন কবুতর খাওয়ার ফলে কবুতরের সংখ্যা কিছু হ্রাস পেলো। একদিন কবুতরের উপর খেয়াল হলো হযরত শাহজালাল (রহ: ) ’র। খাদেম গণকে তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা আসল ঘটনা খুলে বললো। হুকুম হলো শাহপরাণ (রহ: ) কে ডেকে আনার। হযরত শাহপরাণ ( রহ: ) তখন মোরাকাবায় ছিলেন। তাঁকে তলবের কারণ জানতে পেরে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করুন, আমি কবুতরগুলো ফেরৎ দিচ্ছি।’ এই বলে তিনি হুজরার পার্শ্বে রক্ষিত পালকগুলো হাতে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন- যাও আল্লাহর হুকুমে তোমরা হযরত শাহজালালের দরবারে উড়ে যাও। সাথে সাথে কবুতরগুলো জিন্দা হয়ে উড়ে গেল। ভাগ্নার এহেন কারামতি দেখে মামা ও মুর্শিদ হযরত শাহজালাল (রহ: ) অত্যন্ত খুশী হলেন। তাঁকে দূরে কোথাও আস্তানা স্থাপন করতে নির্দেশ দিলেন। মামার আদেশ অনুসারে তিনি খাদিম পাড়া চলে যান এবং সেখানে তাঁর সাধনা ক্ষেত্র ও ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন।