ঢাকা, শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক ১৪৩১
আস্থার সংকটকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা

৪ মাসের মধ্যে ডিএসই সূচকের বড় পতন, উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা

সালেহ্ বিপ্লব, ঢাকা | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৩:৪০:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এর সূচকের পতন চার মাসের মধ্যে সর্বাধিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতির জন্য নীতি সূদ হার বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউএনবি

গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচকটি তার নিম্নমুখী ধারা আরও বেড়েছে, যা ৫ হাজার ১১৫ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমেছে।

গত ১২ জুনের পর যা সর্বনিম্ন সূচক। সেসময় সূচক ছিল ৫ হাজার ৮৩ পয়েন্ট। গত পাঁচ সপ্তাহে ডিএসইএক্স মোট ৬১৬ পয়েন্ট হারিয়েছে।

বিশ্লেষকরা এই চলমান সূচকের পতনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন, যা তার নীতির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব বাড়িয়েছে, যা ডিএসইর ওপর বিক্রির চাপ আরও তীব্র করেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর নিয়ন্ত্রকদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হতাশাজনক মনোভাব অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বিস্তৃত বাজারে বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।

সার্বিক বাজার পতন সত্ত্বেও লেনদেন পরিমিতভাবে বেড়েছে। সাপ্তাহিক লেনদেনটি আগের সপ্তাহের ৩১৮ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন ব্যাংকিং খাতে। যা মোট ব্যবসার ২২ দশমিক ৭ শতাংশ, তারপরে ফার্মাসিউটিক্যালস (১৬ শতাংশ) এবং খাদ্য (১১দশমিক ২ শতাংশ)। তবে সব খাত ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, কাগজ খাত সবচেয়ে বেশি ১১ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ইবিএল সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ন্যাশনাল ব্যাংক, রবি ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজসহ নামিদামি কোম্পানির সম্মিলিতভাবে সূচক ৫৬ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় শেয়ার বাজারের বেশি মূলধনী শেয়ারগুলো নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

চলতি সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা এখন দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকায়। গত পাঁচ সপ্তাহে বাজার মূলধন সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা সংকুচিত হয়েছে, যা আগামী মাসগুলোতে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।

এছাড়া ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭৯ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৪৪ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও  ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বৃহত্তর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ আপস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পর সংস্কার কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে, যা খাতের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। সরকার টেকসই ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা শেষ পর্যন্ত বাজার পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাজারের সাম্প্রতিক কার্যক্রমও মানসম্পন্ন শেয়ারের ঘাটতিরই প্রতিফলন। শক্তিশালী শেয়ারের অভাব এবং অর্থ ও আর্থিক বাজারের মতো খাতগুলোতে অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। একবার এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো যেতে পারে।

ডিএসই এই অর্থনৈতিক ও নীতিগত প্রতিকূলতা অব্যাহত রাখায় অংশীজনরা আশাবাদী। টেকসই নীতি সংস্কার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টা বাজারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

 বায়ান্ন/এসবি