ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম নামে মিথ্যা মামলা, পিবিআই বরাবর স্মারকলিপি

সঞ্জয় সাহা, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ | প্রকাশের সময় : রবিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫২:০০ অপরাহ্ন | গণমাধ্যম

প্রেসক্লাব গাইবান্ধার যুগ্ম সম্পাদক ও নিউজবাংলার গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি পিয়ারুল ইসলামের নামে আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলায় ফাসানোর প্রতিবাদে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে জেলা পিবিআই কার্যালয়ে প্রেসক্লাব গাইবান্ধার পক্ষ থেকে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। পিবিআই পুলিশ সুপারের পক্ষে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন ইন্সপেক্টর আব্দুস সবুর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিন সেন, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান রাজু, সাধারন সম্পাদক জাভেদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন আকন্দ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক লাল চাঁন বিশ্বাস সুমন, কার্যকরী সদস্য শাহজাহান সিরাজ, ওবাইদুল ইসলাম, রুবেল প্রমাণিক, সোহেল রানাসহ উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে এক রিকশাচালককে নির্যাতন ও পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর ঘটনায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পিয়ারুল ইসলামকে নারী নির্যাতনের একটি মামলায় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দিপংকর সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যে মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দিপঙ্কর সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ দক্ষ অফিসারের মাধ্যমে মামলাটি পুণরায় তদন্ত করার দাবিও জানানো হয়।

ঘটনায় বর্ণনায় স্মারকলিপিতে বলা হয়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের পূর্ব দামোদরপুর গ্রামে গত জুনে ছকু মিয়া নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয় নির্যাতনে। নিহতের ছেলে মোজাম্মেল হক মামলায় অভিযোগ করেন, স্থানীয় দাদনকারবারির ছয় ভাই ১৫ মে হাত-পা বেঁধে রাতভর পিটিয়ে তার বাবার হাত-পা ও দাঁত ভেঙে দেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই দাদনকারবারিদের সঙ্গে ছকু মিয়ার দাদনের টাকা নিয়ে পুরোনো বিরোধ ছিল। ছকুর ছেলে মোজাম্মেলের সঙ্গে দাদন কারবারি মন্টু মিয়ার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক জানতে পেরে মন্টু তার ভাইদের নিয়ে ছকুকে রাতভর নির্যাতন করে।

আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া রাতভর ছকুকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে কোনো চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে পরদিন ১৬ মে দিনভর তাকে জিম্মি করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

এক সপ্তাহ পর দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ জে এম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ‘ছেলের প্রেমের খেসারত’ হিসেবে ছকু মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই টাকার জন্য ছকুর একমাত্র ঘরটিও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন দাদনকারবারিরা। এরপর তাকে ভিটেছাড়া করা হয়। পরে ছকু মিয়া আশ্রয় নেন গাজীপুরের শ্রীপুরে ছেলের বাসার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জুন মৃত্যু হয় তার।

পরে ছকুর ছেলে মোজাম্মেল বাবা হত্যার মামলা করতে চাইলে থানায় তার মামলা নেয়া হয়নি। উল্টো মোজাম্মেল ও তার বোনকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে ওই ছয় ভাই।

পরবর্তী সময়ে গত ১৬ জুন ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে (সাদুল্লাপুর) মামলা করেন। মামলায় ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু, মন্টুসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। পরে আদালতের বিচারক শবনম মুস্তারী সাদুল্লাপুর থানাকে মামলা রেকর্ডভুক্ত করে ২৩ জুনের মধ্যে মরদেহ উত্তোলন ও ময়নাতদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

পুরো ঘটনায় শুরু থেকে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।

আদালতের এই নির্দেশনা পাওয়ার পরই ছকু হত্যার প্রধান আসামি মন্টু মিয়ার স্ত্রী বাদী হয়ে তাদের মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গাইবান্ধা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ছকুর ছেলে মোজাম্মেল, নিউজবাংলার গাইবান্ধা প্রতিনিধিসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় সাক্ষী হন ছকু হত্যা মামলার নয় আসামি।

এই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কোনো আলামত মেলেনি শারীরিক পরীক্ষায়। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার বরাত দিয়ে চিকিৎসকের মন্তব্য লেখা হয়েছে: ‘নো সাইন অফ ফোর্সফুল সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স।’

মূলত ছকু হত্যা মামলাটির কার্যক্রম ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। সেই সাথে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঘটনাটি জনসমক্ষে আনায় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের উপর ক্ষোভ জন্মানোয় তাকেও পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে সেই মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদিপক্ষে প্রভাবিত হয়ে এমন মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয়াসহ আসামি পক্ষের কাছে ঘুষ না পাওয়ায় এমন ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছেন বলেও সেখানে বলা হয়।