ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

নদীর পাড়ে অসংখ্য গর্ত করে প্রজননের জন্য বাস করছে গাঙ শালিকের দল

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৪:২৫:০০ পূর্বাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

সূর্য উঠার সাথে সাথে গাঙ শালিকের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে ঝিনায় নদীর পাড়। তাদের এ কিচিরমিচির শব্দ শুনতে দূরদুরান্ত থেকে নানা বয়সি মানুষ দেখতে আসেন। পাখিরা ঝিনাই নদীর পাড়ে গর্ত করে থাকেন। সকাল হলে গর্ত থেকে বের হয়ে ছুটে যান খাবারের সন্ধানে। আবার বিকেল হলে চলে আসেন তাদের গন্তব্য স্থলে। 

গাঙ শালিক ছোট প্রজাতির প্রাণী। এরা গাছে বাসা করে থাকেন। কিন্তু বছরের মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাস বিভিন্ন নদীর তীরে গর্ত করে বসবাস করেন। এমন দৃশ্য মূলত বছরের দুই মাসেই দেখা যায়। বর্তমানে গাঙ শালিকে ভরে গেছে ঝিনায় নদীর পাড়। 

এমন দৃশ্য এখন টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের কুমুল্লি নামদার এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিনাই নদীর পাড়ে। বাঁশের সাঁকো পারি দিলেই গাঙ শালিকের আবাসস্থল। মৌসুমের মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাস গাঙ শালিকের প্রজননের সময়। তাই গাঙ শালিকের দল বৃহত্তর পরিবার নিয়ে নদীর পাড়ে মাটিতে অসংখ্য গর্ত করে বাসা বানিয়ে বসবাস করছেন। হাঁটা পায়ে বাঁশের ছোট্ট সাঁকো পাড় হওয়ার সময় সামনে নদীর পাড়ে গাঙ শালিকের বাসা দেখতে পাওয়া যায়। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে পুরো এলাকা। সাঁেকা পাড় হওয়ার সময় এই মনোরম সুন্দর দৃশ্য দেখে নদী পাড় হন গ্রামবাসী।

গাঙ শালিকের সৌন্দর্য সবাই ভালোবাসেন। স্থিতু প্রজাতির এই শালিক মূলত বড় নদী, বিলের উঁচু পাড়ে মাটিতে গর্ত কুঁড়ে বাসা বানায়। এরা সর্বভূক। প্রয়োজনে ছোট মাছও এদের খাদ্য তালিকায় অন্তভূর্ক্ত হয়। জমি চাষ করার সময় এরা ঝাঁক বেঁয়ে লাঙলের পেছনে পেছনে ছুটে বেড়ায় কেঁচো বা মাটির নিচের অন্যান্য পোকামাকড় ধরে খাওয়ার লোভে। নদী বা বিলের ছোট মাছও খুব প্রিয় গাঙ শালিকের। বৃষ্টি এলে হালকা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নরম মাটি থেকে কোঁচো, পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে গাঙ শালিক। 

নদী ভাঙার সময় মাটির চাপ যখন নদীতে তলিয়ে যায় আর ওই সময়ে ভেসে ওটা পোকাও এরা খেয়ে থাকে। খড়কুটো, ঘাস পাতা এবং নানা রকম আবর্জনা দিয়ে গাঙ শালিকেরা নদীর তীরে বা বিলের উঁচু জায়গায় গর্ত করে বাসা বানায়। বাসাগুলো দেখতে বেশ বড়সড় হয়। ভাত শালিক আর ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে হলেও কিছুটা ঠোঁট মোটা উজ্জল হলুদ রংয়ের। ঠোঁটের ওপর উঁচু পালকের ঝুঁটি এবং দু’চোখের পাশে লম্বা লাল আভায় এদের আলাদা করে চেনা যায়। এদের বুকের পালক ধূসর এবং পিঠ ও মাথার পালক পাটকেলে রংয়ের। সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয় প্রতিটি পাখি। 

ওই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাদের মিয়া বলেন, ঝিনার নদীর পাড়ে গাঙ শালিক গর্ত করে বসবাস করছেন। সকাল বেলা গাঙ শালিকের কিচিরমিচির শব্দে আমাদের পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে থাকে। পাখি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আছে। 

স্কুল পড়ুয়া ছাত্র আব্দুর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন পাখি দেখতে আসি। গর্তের ভিতরে পাখি বাচ্চা তুলে, বাচ্চা ধরার জন্য আসি। কিন্তু বাচ্চা ধরলে পাখি চলে যায়, তাই আমি বাচ্চা এখন ধরি না। 

শহর থেকে পাখি দেখতে যাওয়া মোজ্জাম্মেল হক বলেন, গাঙ শালিক বছরের দুই মাস নদীর পাড়ে গর্তে করে বসবাস করে। এই সুন্দরর্য দেখার জন্য আমি শহর থেকে এসেছি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে অনেক ভালো লাগে। 

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া বলেন, গাঙ শালিকের ইংরেজী নাম ব্যাঙ্ক ময়না। স্ত্রী গাঙ শালিক ৪ থেকে ৭টি উজ্জল নীল রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২১ দিন। ছোট শাবক উড়তে শেখে ১৯ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে। ছানারা ওড়া শেখার আগ পর্যন্ত এরা মা-বাবার মুখের খাবার খেয়েই বড় হয়।