ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর জানাযা নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন

কলিট তালুকদার, পাবনা : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৬:০০ অপরাহ্ন | গণমাধ্যম

পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমের মৃত্যুর ঘটনায় পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ অস্ত্র ও গুলিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। রোববার নিহতের ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমের বাবা মোজাম্মেল ওরফে মুজা খা বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভাড়ারা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খাঁকে প্রধান আসামী তার অপর ভাই দোগাছী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাব খাঁসহ ৩৪ জন নামীয় ও ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশী পিস্তল, ও এক রাউন্ড গুলিসহ মামলার দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, ভাড়ারা ইউনিয়নের নলদহ গ্রামের দিরাজ সরদারের ছেলে নজরুল সরদার (২৪) ও একই এলাকার বকুল খানের ছেলে মুন্নাফ খান (২২)।
রোববার সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমের ময়না তদন্ত সম্পন্ন শেষে মরদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১২ টার দিকে নিহতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে হাজার হাজার মানুষ একনজর দেখতে ভিড় করেন। এলাকাবাসী ও স্বজনদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় এলাকাবাসীরা দোষীদের শাস্তি দাবী করেন।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন পারভিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসে। তার কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়নি। বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদের আগে থেকে টার্গেট ছিল আমার স্বামীকে হত্যা করার।
নিহতের বাবা মোজাম্মেল খাঁ বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খাঁ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এলাকায় পোস্টার ছেঁড়া থেকে শুরু করে প্রচারণা মাইক ও অফিস ভাঙচুর, কর্মীদের হুমকি ও আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আমার ছেলেকে হত্যার মাধ্যমে আবু সাঈদ খাঁ তার ইচ্ছে পূরন করেছে।
এদিকে রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ হাফিজিয়া মাদরাসা মাঠে নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমের জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। এ সময় দোষীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে জানাযা স্থল।
ওহিদুল মাস্টারের সঞ্চালনায় জানাযা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন- পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন, পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রোকনুজ্জামান, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামসহ অনেকে। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ভাড়ারা ইউনিয়নের পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সাঈদ চেয়ারম্যান অস্ত্র ও সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সে এখন তার টাকা ও ক্ষমতার জোরে সাধারণ জনগণের ওপর গুলি করছে। গত বছর এই মাঠেই আমরা জোড়া খুনের জানাযা পড়েছি। সেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সাঈদ সরাসরি জড়িত থাকলেও টাকার জোরে সেই মামলা থেকে তার নাম বাদ পড়ে যায়। সেই হত্যাকান্ডের বিচার এখনো হয়নি। সেই হত্যা কান্ডের বিচার হলে আজ আর হত্যাকান্ড সংঘঠিত হতো না।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচারনার সময় আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খান ও তার সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদের সর্মথকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় সুলতান মাহমুদের সাথে তার চাচাতো ভাই অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলম সাথে ছিলেন। সংঘর্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়। মুমুর্ষ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলমের।