ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা ঝিনাইদহের ফুল চাষীদের

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২:৫২:০০ পূর্বাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তার কয়েকদিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিনটি দিবসের বাজার ধরতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা। দিবসগুলো উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে সারা বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব কষবেন তারা। শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগ ও চাষীদের।  

 

জানা যায়, ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় ফুল বাজার গান্না ফুল বাজার। বাজারে গেলেই দেখা যাচ্ছে এলাহী কান্ড। বাহারি ফুল গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপসহ প্রায় সবধরনের ফুল দেশের প্রত্যেকটা জেলায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। টার্গেট সামনের আগত তিন দিবস। বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখেই সর্বোচ্চ দাম পাওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে। প্রতিদিন এ বাজার থেকেই ফুল যাচ্ছে প্রায় কোটি টাকার। ফুলের রং, সাইজ ও প্রকৃত গন্ধ থাকায় এ জেলার ফুলের চাহিদা দেশজুড়ে। অন্যদিকে জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধাসহ নানা রঙের ফুল ও তার গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। ফুলের কড়ি ধরে রাখতে আর ফলন ভালো পেতে বাগানগুলোকে রাখা হয়েছে স্বযত্নে। এ বছর সমগ্র জেলায় ফুলের চাষ হয়েছে ২১৬ হেক্টর জমিতে।

 

সরেজমিনে বিভিন্ন ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল প্রস্তুত করে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক ও ব্যসায়ীরা। কেউ বাগান থেকে ফুল কাটছেন, কেউ বাজারে ফুল বাজারে নিয়ে আসছে, সেই ফুল ক্রয়বিক্রয় শেষে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল পর্যন্ত গোলাপ ৪৫ টাকা, জারবেরা ১২-১৩ টাকা, রজনীগন্ধা ৮-১০ টাকা, গাঁদা ঝুপা ৩৫০-৩৮০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রকারভেদে ২-৬ টাকা করে বিক্রয় হচ্ছে।

 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঝিনাইদহে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয় এবং ফুল সেক্টরের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। ঝিনাইদহ সদর ৩৭ হেক্টর, কালীগঞ্জ ১৫০ হেক্টর, কোটচাঁদপুর ৪৫ হেক্টর, মহেশপুর ১৫৯ হেক্টর এছাড়াও হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপাতে ৯ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে।

 

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল চাষি ফজলুর রহমান খান বলেন, ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি বেশি হয়। এজন্য বেশি বেশি করে ফুলের পরিচর্যা করতে হয়। বিশেষ করে ফুলের মান ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আশা করছি ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারব।

 

মহেশপুর উপজেলার নেপা কুল্লা গ্রামের লিটন হোসেন  বলেন, সারা বছর ফুল চাষ করে কোনো রকম টিকে থাকতে হয়। আবার যখন কোনো উৎসব বা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার বাড়ে তখন দেশের বাইরে থেকে ফুল আসে আমাদের দেশে। যার ফলে ফুলের বাজার কমে যায়। তবে আমাদের দেশে যে ফুল উৎপাদন হয়, সেই ফুলগুলো বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে ফুল চাষিরা অনেক বেশি লাভবান হতো। আমাদের সরকারের কাছে একটাই চাওয়া বিদেশ থেকে ফুল আমদানি বন্ধ করে দেশের ফুল বিদেশে রপ্তানি করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

 

সদর উপজেলার গান্না গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে গোলাপ বাগান রয়েছে। বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ রঙের ফুল ভালোবাসা দিবসে অনেক বেশি কদর থাকে। এ বছর আবহাওয়া কারণে উৎপাদন অনেক কম। গাছে এখন নতুন কুঁড়ি এসেছে। আর যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ভিটামিন স্প্রে করছি। ভালোবাসা দিবসের আগেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের দাম বেড়েছে। বাজারে একটি গোলাপ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

ঝিনাইদহ জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দীন বলেন, সারাবছর ফুল বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও মূলত বেচাকেনা হয় উৎসব ঘিরে। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে দুইশত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। 

 

ঝিনাইদহ ফুলচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি জামির হোসেন জানান, সামনের তিন দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের দাম ভালো। সামনের দিনে আরও ভালো হবে আশা করছেন তিনি। গতমাস ও এ মাসে প্রায় শত কোটি টাকার ফুল ঝিনাইদহ থেকে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।

 

তিনি আরও বলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, কোটচাঁদপুর, মহেশপুরে ব্যবসায়ীদের পাওয়া তথ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হচ্ছে। সারাবছরের লাভক্ষতি এই দিবসকে ঘিরে উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা।

 

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি আজগর আলী জানান, ফলন ভালো পেতে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও সদর উপজেলার প্রায় ১০টি বাজার থেকে প্রতিদিন এ ফুল ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বাংলাদেশে। এ জেলায় বাংলাদশের সবচেয়ে বেশী গাঁদা ফুল উৎপাদন করা হয়। যা দেশের আর কোথাও এ পরিমাণে হয় না। কৃষি বিভাগ ফুল চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং নিয়মিত বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে।