ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে রড-সিমেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২২ অগাস্ট ২০২২ ১১:৩১:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

 

দেশে কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। হঠাৎ করেই ডিজেলের দামও বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এই দুই দাম বৃদ্ধির সরাসরি ভুক্তভোগী হয়েছে দেশের নির্মাণ খাত। জ্বালানি এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপকরণ রড। তার সঙ্গী হয়েছে সিমেন্ট। কারণ রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই দেশে আসে আমদানি হয়ে। এর মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। আর পরিবহন করতে হয় জাহাজ ও ট্রাকে।

রড-সিমেন্টের ডিলার, মিলমালিক এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে একমাসের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ৯২ হাজার ৩শ টাকায়। এর আগে কখনো রডের দাম এত বেশি হয়নি। একমাস আগেও এসব রড ছিল ৮৫-৮৬ হাজার টাকা। আবার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৩০ টাকায়। এর আগে গত মার্চে সিমেন্টের দাম ৫২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে একমাস আগে এসব সিমেন্ট ছিল ৪০০-৪২০ টাকা।

 মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। বর্তমানে ডলার এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছে। এ কারণে বিক্রি একেবারে কমে গেছে। 

চট্টগ্রাম মহানগরীর শাহ আমানত সেতু-বহদ্দারহাট সংযোগ সড়কের বাকলিয়া এলাকার রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী আকিল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে রড-সিমেন্টের দাম হু হু করে বাড়ছে। একমাসের ব্যবধানে রডের দাম প্রতি টনে ৫-৮ হাজার টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিএসআরএম ব্র্যান্ডের এমএস রড ৯২ হাজার ৩শ টাকা, কেএসআরএমের রড ৯০ হাজার ৫শ টাকা, একেএস ৯১ হাজার ৫শ এবং জিপিএইচ ৯১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এখন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিলে ব্যাংকগুলোর লোন রেগুলার করা যাবে না। এতে ব্যাংকের সঙ্গে কারখানা মালিকদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। সে কারণে এখন লস দিয়ে হলেও মাল বিক্রি করে যাচ্ছি। 

মইজ্যারটেক এলাকার রুপালি ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার জয়দেব সাহা জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে বর্তমানে ৫শ টাকার নিচে কোনো সিমেন্ট নেই। মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। বর্তমানে ডলার এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছে। এ কারণে বিক্রি একেবারে কমে গেছে।

বাজারে বর্তমানে রড-সিমেন্টের দামে অস্থিরতা চলছে বলে জানালেন পটিয়ার ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান বাবু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একমাসে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ১২০-১৩০ টাকা বেড়েছে। ৪৩০ টাকার রুবি সিমেন্ট এখন ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডায়মন্ড সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা। একমাস আগে ছিল ৪২০ টাকা। তবে প্রিমিয়ার সিমেন্টের দাম কিছুটা কম আছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৪৯০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হলে রয়েল সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আবুল মনসুর রোববার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, এখন ডলারের দাম ২২-২৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে ৮৪-৮৫ টাকা হিসেবে ডলার পেমেন্ট দিতাম। এখন সেই ডলার ১১০-১১২ টাকা পর্যন্ত গিয়েছিল। তাছাড়া সিমেন্টের কাঁচামালের যে দাম বেড়েছে তার দাম কমেনি। আগে যে ক্লিংকার ৪০-৪২ ডলারে পাওয়া যেত, এখন সেই ক্লিংকারের দাম ৬৫ ডলারের উপরে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কারখানা থেকে সিমেন্ট সরবরাহে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের শুধুমাত্র পরিবহন খরচ বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। সব মিলিয়ে বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ কারণে একদিকে দাম বেড়েছে, অন্যদিকে চাহিদা কমে গেছে। কারণ রড-সিমেন্টের দাম বাড়ায় মানুষ নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে।