একটি সময় নড়াইল-কালনা-যশোর সড়ক অবহেলিত ছিল। সড়ক যোগাযেগের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব বহন করত না। আঞ্চলিক সড়ক ছিল এটি। অথচ এ সড়কের গুরুত্ব এখন অনেক বেশি। সড়কটি এখন ঢাকা-মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক। এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ। বিশেষ করে গত ১০ অক্টোবর ছয় লেনের কালনা তথা মধুমতি সেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণার পর সড়কটিতে যানাবাহন চলাচল অনেক বেড়েছে। তবে ভোগান্তি ও কষ্ট পিছু ছাড়েনি। ছয় লেনের সেতুতে দুই লেনের সড়ক যোগাযোগ চালু থাকায় যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তো সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
কারণ, গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে এ সড়কে ঝড়ে উপড়েপড়া একটি গাছ কাটতেই প্রায় ১৯ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এমন ভোগান্তি ও কষ্টের কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অনেকে প্রশ্ন করেছেন-কোনো ক্ষেত্রে যদি পাঁচ বা ততোধিক গাছ সড়কে ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে সেই গাছগুলো কাটতে কত ঘণ্টা সময় লাগবে? একটি গাছে যদি ১৯ ঘণ্টা সময় লাগে, তাহলে পাঁচটি গাছ কাটতে ৯৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। যা তিনদিনের বেশি। তথ্য-প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগেও কেন এতো সময় লাগছে একটি মাঝারি বটগাছ অপসারণ করতে ! তাও ঢাকা-মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ক্ষেত্রে। ঝড়ের প্রভাবে গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে নড়াইলের মাদরাসা এলাকায় বটগাছ পড়ে ঢাকা-মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীসাধারণসহ অসুস্থ রোগি। শত শত যানাবাহন আটকাপড়ে সড়কের দুইপাশে।
ভুক্তভোগীদের এমন দুর্ভোগ ও কষ্টের প্রশ্নে নড়াইল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মাসুদ রানা বলেন, আমাদের লোকবল সংকটসহ উদ্ধার কাজে যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে রাতের বেলায় ডালপালা কেটে গাছ অপসারণ করতে সমস্যা হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, আউড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় গাছ অপসারণের কাজ শুরু হয়।
সচেতনমহলসহ এ সড়কে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীসাধারণ বলেন, ভবিষ্যতে যে কোনো ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় নড়াইল ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি, লোকবল সংকট দুর করাসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তা না হলে একটি গাছ অপসারণে ১৯ ঘণ্টা বা তার চেয়ে সময় বেশি লাগতে পারে। বিষয়টি এখনি ভাবা দরকার নয় কী ? এমন প্রশ্ন রেখেছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, মধুমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ঢাকা-মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়কটি সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখছে। মধুমতি সেতু চালু হওয়ার পর শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে সড়কটি। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ সড়কের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। #