সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা পিয়ারা বেগম। সাত সন্তানের জননী । ৮ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। স্বামী হারানো এ নারী জীবনযুদ্ধে তিল তিল করে সংসারের সচ্ছলতা আনতে লড়াই করছিলেন। এনজিও ঋণ আর গয়না বিক্রি করে কিনেছিলেন ছয়টি গরু।একরাতেই গরুগুলো চুরি হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।
গরুর দুধ বিক্রি করে ঋণের কিস্তির টাকা এবং সংসারের যোগান চলতো এ বৃদ্ধার। গরুগুলো চুরি যাওয়ার পর থেকেই কান্না থামছে না পিয়ারা বেগমের। ঋণের টাকা পরিশোধ আর সংসার খরচ যোগানের দুশ্চিন্তায় কাটছে তাঁর দিন।
চুরির ঘটনায় গত সোমবার জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চোরেরা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। গত রোববার রাতে গোয়ালঘরের সব গরু চুরি হয়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে বিভিন্ন এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করব। এ চিন্তায় চোখে ঘুম নেই।
তিনি জানান, প্রতিদিন চার লিটার দুধ বিক্রি করে ৪০০ টাকা পেতেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর গরু লালন-পালন করে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বিয়ে দেন। তৈরি করেন টিনশেডের আধপাকা ঘর।
ওই নারী জানালেন, দুই সপ্তাহ আগে একটা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি আর ছেলের বউয়ের একটা গয়না বেচে একটা ষাঁড় কিনছিলাম। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল।
পিয়ারা বেগমের ছোট ছেলে কামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি জাতের তিনটা গাভী ও তিনটা ষাঁড় গরু ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র সম্বল। মায়ের সঙ্গে আমরা দুই ভাই গরু লালন-পালন করি। প্রতিদিনের মতোই গত রোববার ২টার দিকে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে ঘুমায়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি গোয়ালঘরের তালা ভাঙা। ভেতরে ঢুকে দেখি গরু নাই। পরে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে একটা গরুরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাবা মারা যাওয়ার যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই ও ৫ বোন মায়ের সঙ্গে সংসারে মাকে সহযোগিতা করতাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম জানান, আট বছর আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ আর নিজের গয়না বেচে কিনেছিলেন কয়েকটি গরু। সেই গরুর দুধ বেচা টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেওয়াসহ ভালোই চলছিল পিয়ারা বেগমের সংসার। কিন্তু সেই গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে ওই নারীর সংসার।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং গরুগুলো উদ্ধারে কাজ করছে।