ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এসএসসি পাসেই বিআরটি প্রকল্পের ‘সেফটি ইঞ্জিনিয়ার’ জুলফিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৮ অগাস্ট ২০২২ ০৮:২২:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যানজট নিরসনে ২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেড়েছে মেয়াদ। মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে এর জনবল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি) প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব দেয় জুলফিকার আলী শাহকে (৩৯)। জুলফিকার সিজিজিসির বিআরটি প্রকল্পের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০২১ সালে যোগদান করেন।

এসএসসি পাস জুলফিকারকে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ তার কোনো ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক দক্ষতা ছিল না। জুলফিকার প্রকল্পের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি)। সিজিজিসি থেকে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে ইফসকনের কাছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা ‘থার্ড পার্টি’ প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছ থেকে ক্রেন ভাড়া নেয়। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটিও তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া। ওই প্রকল্পের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে আজমপুর পর্যন্ত অংশে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ। এসএসসি পাস জুলফিকারের কোনো ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক দক্ষতা ছিল না। তারপরও তাকে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, দুর্ঘটনার দিনে ভারী গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জুলফিকার কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন ও পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেননি। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়া সত্ত্বেও তিনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।

এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরে কেন এত আলোচনা? দুর্ঘটনা ঘটার আগে সচেতনতা কেন নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা উচিত। সেই কাজ তারা করেনি। তাছাড়া এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী থাকা সত্ত্বেও গার্ডার স্থাপনের সময় তাদের নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন অনুযায়ী ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা চীনা কর্মকর্তাদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসবে এই ঘটনায় দায়ী কারা। এছাড়া প্রাথমিকভাবে যাদের দায় রয়েছে বা জড়িত রয়েছেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডারচাপায় প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এতে আহত হন একই গাড়িতে থাকা এক নবদম্পতি। নিহতরা হলেন আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝর্ণা আক্তার (২৭), ঝর্ণা আক্তারের দুই শিশুসন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (৪)। মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।