ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বঞ্চিত মাতারবাড়িবাসী, কথা রাখেনি কেউ-ই

কক্সবাজার মহেশখালীতে আবারো লন্ডভন্ড বেড়িবাঁধ

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৯ মে ২০২৪ ০৯:১৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘুর্ণিঝড় রেমালের সামান্য অগ্রবর্তী শক্তির বাতাসের সাগরের জোয়ারের পানিতেও লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ী ধলঘাটার নড়ভড়ে বেড়িবাঁধ। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। বেড়িবাঁধের উপর ও নিচের শত শত পরিবার এখন বাস্তুচ্যুত।  দেশের দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া ও সিঙ্গাপুর হিসেবে পরিচিত মহেশখালীর মাতারবাড়ী। নামে আলোচিত হলেও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপদ বেড়িবাঁধ, কারিগরী শিক্ষা, প্রকল্পে চাকরি সহ সর্বত্রই বঞ্চিত মাতারবাড়ীবাসী। তবে এরজন্য স্থানীয় নেতৃত্বের কমিশন বাণিজ্যিকে দায়ী করেন বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে পশ্চিমের বেড়িবাঁধ ও মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কের ভোগান্তি নিয়ে সীমাহীন হতাশ জনগণ। তবুও মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের' এমন অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের দীর্ঘ ৩৩ বছরেও বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকলেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ,পরিদর্শন আর প্রতিশ্রুতিতে আঁটকে আছে মাতারবাড়ী ধলঘাটবাসীর স্বপ্নের বেড়িবাঁধ। ইতিপূর্বে কয়েক দফায় বর্ষামৌসুমে বেড়িবাঁধ মেরামত ও জরুরী মেরামতের নামে যেনতেন ভাবে কাজ করে লুটপাট চলছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

 

 

        সরজমিন স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে এর সত্যতাও মেলে, জিওব্যাগ ভরাটের জন্য বালি নেওয়া হয়েছিল বেড়িবাঁধের কাছ থেকে। এছাড়াও জিওব্যাগের নিচে জিও টেক্সটাইল না দেওয়ার সাগরের প্রবল ঢেউয়ে নিচের মাটি সরে গিয়ে অল্প সময়ে বিলীন হয়ে যায় বেড়িবাঁধটি। দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরখ্যাত মাতারবাড়ী নামে সিঙ্গাপুর হলেও বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। দীর্ঘদিনের অরক্ষিত পশ্চিমের বেড়িবাঁধ ও প্রধান সড়কের নাজুক  অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছেনা স্থানীয়দের। ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ, অতঃপর আবার শুরু হয় নামমাত্র মেরামত। শতাধিক ঘরবাড়িসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় তখন। তবুও মিলেনি প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবেও ক্ষতবিক্ষত বেড়িবাঁধটি লন্ডভন্ড। ভিটেমাটি হারানো বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া অনেক অসহায় পরিবার আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ভাঙ্গনের ফলে। 

 

 

     অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান নি কেউ-ই। এই বর্ষায় পরিবার নিয়ে কোথায় আশ্রয় হবে তা জানেনা আশ্রয়হীন মানুষেরা, ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি কোন সহায়তা। তবে স্থানীয়রা ত্রাণ নয়, চায় টেকসই বেড়িবাঁধ। 

 

স্থানীয়দের ধারণা পশ্চিমের বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রাখলে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যাবে,তখন সহজেই অল্পমূল্যে জায়গা জমি নিয়ে ফেলা সহজ হবে রাঘববোয়ালদের। অথচ মাতারবাড়ীর এক একর জায়গার বিক্রয় মূল্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা সমূহে এককানি খাস জমিও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান অনেকেই।

 

কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জায়গা অধিগ্রহনের পূর্বে স্থানীয়দের জীবন মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি কেউ-ই' এমন অভিযোগ উঠেছে। জনভোগান্তি নিয়ে মাঝেমধ্যে অনেকটা দায়সারা ভুমিকা মঞ্চায়ন করে নেতারা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। যদিও স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেছেন, খুব শীঘ্রই মাতারবাড়ীতে সুপারডাইক বেড়িবাঁধ বাস্তবায়ন হবে, ঘুছবে দুর্ভোগ।

 

স্থানীয়রা জানান -১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিশ্রুতিতে জর্জরিত জনজীবন, ভোগান্তি তাদের নিত্যসঙ্গী' এমনটা জানান ভুক্তভোগী মানুষগুলো।

 

প্রতিশ্রুতি ও পরিদর্শনে সীমাবদ্ধ নাগরিক অধিকার' এমনই জানান ভুক্তভোগীরা। তবে প্রায় সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ জেলা প্রশাসক কক্সবাজার,  নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড সরজমিন পরিদর্শনে আসলেও কাজের কাজ কিছুই না হওয়ায় হতাশ জনগণ। 

 

 

     অরক্ষিত বেড়িবাঁধ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার' আসিফ আহমেদ জানান - আসলে আমার কিছু করার নেই। জরুরী মেরামতের কাজ ইচ্ছে করলেও শুষ্ক মৌসুমে করতে পারেনা। আইনত জরুরী মেরামত কাজ দূর্যোগের পর করতে হয় বলেও জানান তিনি। লন্ডভন্ড বেড়িবাঁধ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন' অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করবেন বললেও নিজেদের হতাশার কথা অকপটে স্বীকার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো।